হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ৫ম পাতা

৪১.
শোন বন্ধু শোন প্রাণহীন এই শহরের ইতিকথা
ইটের পাঁজরে, লোহার খাঁচায় দারুণ মর্মব্যথা।।
এখানে আকাশ নেই, এখানে বাতাস নেই।
এখানে অন্ধ গলির নরকে মুক্তির আকুলতা।।
জীবনের ফুল মুকুলেই ঝরে সুকঠিন ফুটপাতে
অতি সঞ্চয়ী ক্রুর দানবের উদ্ধত পদাঘাতে
এখানে শান্তি নেই, এখানে সত্যি নেই।
প্রাসাদ-নগরী যেন বিলাসের নিদারুণ রসিকতা।।


৪২.
চলিতে চলিতে পথে তোমায় দেখে
কেন যে থমকে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।
মনে মনে হল যেন কত যুগ যুগ ধরে
তোমায় দেখব বলে এখানে ছিলাম।।
বৈশালী নগরে কত উপবনে
কাঞ্চি রাজ্যে আর কোশল দেশে
খুঁজেছি তোমায় আমি কতো কতো বার
কখনো দাওনি দেখা কোথাও এসে।
সেই শিলালিপি থেকে আজকে আমি
নতুন আলোর এক কবিতা পেলাম।।
চলিতে চলিতে পথে।।
সুরসিকা নিপুনিকা কতো হাসি হেসেছি
বিলোল চাওনি আর ভুরু বিলাসে
এতটুকু দাগ তবু কাটেনি মনে
ফিরেছি পান্থ আমি পথের পাশে
সেই পথ এতদিনে বলল আমায়
জীবনে প্রথম আমি পথ হারালাম।


৪৩.
তুমি কি যে বলো বুঝিনা
তুমি কি যে বলো বুঝিনা।।
তোমার মুখের পানে চাহিলে
আমি কিছু শুনিনা
কি যে বলো বুঝিনা।।
হয়ত অনেক কথা দিয়ে যাও
আমারো মনের কথা নিতে চাও
দুটি হৃদয়ের কথামালা
হৃদয়ে গাঁথা থাকে পরিনা পরাতে পারিনা
তুমি কি যে বলো বুঝিনা।।
তার চেয়ে চোখে নয় রাখ ছখ
এভাবে দুজনার কথা হোক।।
শুধু বুক ভরা ভালবাসা
যেখানে পাঠায় ভাষা
সে ভাষায় হেসো বলিনা।।
তুমি কি যে বলো বুঝিনা।।


৪৪.
এ কি চঞ্চলতা
জাগে আমার মনে
ভালো লাগে কত ভালো লাগে।।
এই তো প্রথম দ্বার খুলে
ছুটে আমি এসেছি
ফুলে ফুলে ওই হাসি দেখে
আমিও যে হেসেছি
তারা ভরা এই রাত
আমি দেখিনি কখনো আগে।।
ওগো বাঁশী শোন
আজ বুকে সুর ভরে দাও
আমার আনন্দ আজ
তুমি শুধু জেনে নাও।
কিছু নেই তবু আছি আমি
আজ যেন মেনেছি
ভালো লাগা ওগো কারে বলে
এই তো প্রথম জেনেছি।
ভরে গেছি আমি আজ
এই মায়া ভরা অনুরাগে।।


৪৫.
জীবনপুরের পথিকরে ভাই
কোন দেশে সাকিন না
কোথাও আমার মনের খবর পেলাম না।।
খেয়াল পোকা যখন আমার মাথায় নড়ে চরে
আমার তাসের ঘরের বশতি হে অমনি ভেঙ্গে পরে।
তখন তালুক ছেড়ে মুলুক ফেলে
হইরে ঘরের বার (বন্ধুরে) আমি।
কোথাও আমার মনের খবর পেলাম না।।
মন চলে আগে আগে আমি পরে রই (বন্ধু)।
সোনার পিঞ্জর দিলাম বাধে বাসা কই
পাখি বাধে বাসা কই
অকূল গাঙ্গে ভাসলাম আমি
কূলের আশা ছাড়ি (বন্ধুরে) তবু।
কোথাও আমার মনের খবর পেলাম না।।
যাবার আগে কিছু বলে গেলে না
নীরবে শুধু রইলে চেয়ে
কিছু কি বলার ছিল না।।
তখনো বসন্ত শেষ চৈত্রের বেলা
তখনো বাতাস আঁচলে করে যে খেলা
তখনো পাখির গানে সাজানো ফুলের মেলা
ওদের ঐ উচ্ছ্বাস এতটুকু তুমি কি গো
তোমার হৃদয়ে পেলে না।।
এত কি অভিমান, ভুল বোঝা বল কত
কিসের বেদনাতে প্রেমকে কাঁদালে এত
কিসের অহংকারে এখনো আগেরই মত
আমার এই প্রশ্নের কোনই জবাব তুমি
এখনো আমাকে দিলে না।।


৪৬.
তুমি যাবেই চলে আমি জানতাম।।
আমি জানতাম আমি জানতাম
যেমন করে চলে গেছে
কালবোশেখীর সেই ঝড়
আমি জানতাম।।
তুমি ভেঙ্গেই দেবে আমি জানতাম
আমি জানতাম আমি জানতাম
যেমন করে হঠাৎ এসে যে হাওয়ায়
ভেঙ্গে গেছে ঘর আমি জানতাম
তুমি যাবেই চলে আমি জানতাম।।
আমি দেখতাম আমি দেখতাম
একটু একটু করে মেঘ
মনের আকাশে বাসা বাঁধছে
অকারণ অভিমানে কাঁদছে।।
সেই ভাল মুছে যাক ফেলে আসা সব অবসর
আমি জানতাম আমি জানতাম
তুমি যাবেই চলে আমি জানতাম।।
আমি বুঝতাম আমি বুঝতাম
একটু একটু করে ভুলের প্রাসাদ গড়ে তুলছে
সে প্রাসাদ হাওয়া লেগে দুলছে
সেই ভাল ভেঙ্গে যাক ভুলে ভরা সেই বালুচর।।
আমি জানতাম আমি জানতাম
তুমি যাবেই চলে আমি জানতাম
তুমি ভেঙ্গেই দেবে আমি জানতাম।।


৪৭.
বনতল ফুলে ফুলে ডাকা
দূর নীলিমায় উঠে চাঁদ বাঁকা
শুধু এই পথ চেয়ে থাকা
ভাল কি লাগে।
বাতাসের ফাল্গুনী গান
ভরে তোলে আঙ্গিনা বিতান।
দোলে উঠে মাধবীর প্রাণ
কি অনুরাগে, কি অনুরাগে।।
কপতের বুকে ঐ কত সুখে কপতি ঘুমায়
লীলা ছলে বনলতা কি সোহাগে তরুরে জড়ায়।
ফেলে আসা দুটি কথা তার
ভোলা শুধু হলো না আমার।
একা থাকা এতো যে ব্যাথার
বুঝি নি আগে, বুঝি নি আগে।।


৪৮.
আমার জীবন যেন একটি খাতা
শেষ ক’টি যার পাতা নেই
হয়ত ছিল অনেক কিছুই
শেষ ক’টি সেই পাতাতেই।।
মনের কলম তবুও নাছোড়
আঁকবে কিছু স্মৃতির আঁচড়
মিথ্যে আশার প্রলোভনে
আমায় সে তো মাতাবেই।।
সেই ছেঁড়া খাতার পাতাগুলো
ফিরে পেতাম যদি,
হয়ত সাগর হত মরুর বুকে
হারানো এক নদী।।
আঁধার হয়ে দীপের নিচে
ইচ্ছেটাকে বাঁচাই মিছে
ফুল ফুরিয়েও মালাটি মোর
সুঁচ-সুতোতে গাঁথা নেই।।


৪৯.
যদি জানতে চাও তুমি এ ব্যথা আমার কতটুকু
তবে বন্দী করা কোনো পাখির কাছে জেনে নিও
যদি দেখতে চাও আমার ভিজে যাওয়া চোখ দু’টো
তবে জলে ডোবা কোনো পদ্মফুল দেখে নিও।।
প্রশ্ন করোনা আগ্নেয়গিরিকে
কেন সে ঘুমিয়ে আজ আছে
জবাব পাবে কি তার কাছে
তবু ডানা ভাঙা ভ্রমরকে হাতে ধরে তুলে তুমি রেখে দিও।।
গুনতে চেয়োনা আকাশের তারা
শেষ খুঁজে তার পাবে না
আমার ব্যথাও গোনা যাবে না
নয় আমাদের পরিচয় ভোরের কুয়াশা দিয়ে ঢেকে দিও।।


৫০.
রাধে..রাধে..
রাধে মনটা রেখে এলি
বল কোন মথুরায় ?(২)
একবার মন দিলে হায় রে-
তারে একবার মন দিলে হায় রে-
আর কি ফেরানো যায়!
রাধে মনটা রেখে এলি
বল কোন মথুরায়?(২)
যে ডোরের ওই বাঁধা এ মন,
সে যে বড়ই মজার বাঁধন(২)
বাহিরে আলগা হলে,
ভিতরে জড়ায়-
তারে একবার মন দিলে হায় রে(২)
আর কি ফেরানো যায় !
রাধে মনটা রেখে এলি
বল কোন মথুরায়?(২)
রাধে প্রেম কি কাঁচের চুড়ি ?
রাধে প্রেমতো ঠুনকো নয়,
যদি আঘাত লাগে-
ভাঙবার নেইকো ভয়(২)
নাইবা রইল কাছে কাছে,
তোরই বধু তোরই আছে(২)
কালা যে লুকিয়ে আছে,
নয়ন তারায়
তারে একবার মন দিলে হায় রে –
তারে একবার মন দিলে হায় রে –
আর কি ফেরানো যায়!
রাধে মনটা রেখে এলি
বল কোন মথুরায়?(২)
রাধে..রাধে..