হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (Hemanta Mukhopaddhay)
যদি কোনদিন ঝরা বকুলের গন্ধে হও তুমি আনমনা,
জেনো ওগো গরবিনী, সে নহে সুরভি,
সে যেন গো এই মিলন তিথির কামনা।।
রাত জাগা এক পাখি
হয়তো সেদিন হারানো সাথীরে কাঁদিয়া ফিরিবে ডাকি
সে নহে কূজন, সে যেন গো এই মিলন তিথির কামনা।।
উতলা মাধবী রাতে স্মৃতি যদি ব্যথা আনে
(তুমি) কেঁদো না গো অভিমানে।
যদি কোন অবসরে
কিছু ব্যথা আর কিছু গান নিয়ে বাতাস বিলাপ করে
সে নহে রোদন, সে যেন গো এই মিলন তিথির কামনা।।
২.
ও বন্ধু, এই বকুলঝরা শ্রাবণ রাতে বলব ভাবি কারে
যে কথাটি চোখের জলে ভাসে বারে বারে।
হয় না বলা যায় যে রাতি প্রহর গুণে গুণে
প্রভাত হল এমনি করেই আশারই জাল বুনে
যাবার বেলায় বলব বল সেই কথাটি কারে।।
অনেক দিনের স্বপ্ন অনেক অশ্রু হয়ে ঝরে
জানি কি সে শুধু ওগো সে যে তারই তরে।
অস্তরবির স্বর্ণলেখায় রয় যে কথা লেখা
সাঁঝের আঁধার নামলে পরে রয় কীগো তার রেখা
রাতের নিঝুম লগ্ন এলে হারায় অস্তপারে।।
www.youtube.com/watch?v=NhwLwU5O8GI
সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক বেশ তো
গোধূলির রঙে হবে এ ধরণী স্বপ্নের দেশ তো।।
তারপরে পৃথিবীতে আঁধারের ধূপছায়া নামবেই
মৌমাছি ফিরে গেলে জানি তার গুঞ্জন থামবেই;
সে আঁধার নামুক না, গুঞ্জন থামুক না
কানে তবু রবে তার রেশ তো।।
তারপরে সারারাত দু’জনেই একা একা ভাববো
হৃদয়ের লিপিকাতে কে যেন লিখেছে এক কাব্য।
জোনাকিরা দীপ জ্বেলে আমাদের সাথে রাত জাগবেই,
দু’টি প্রাণে চুপে চুপে নতুন সে সুর এক লাগবেই;
জোনাকিরা জাগুক না, প্রাণে সুর লাগুক না
পাওয়াতে চাওয়ার হবে শেষ তো।।
www.youtube.com/watch?v=k5jJiRalKk0
৪.
যে বাঁশি ভেঙে গেছে তারে কেন গাইতে বল?
কেন আর মিছেই তারে সুরের খেয়া বাইতে বল?
আজ সোনার খাঁচায় বন্দী পাখির কণ্ঠে যে নেই সুর,
আজ যেন সেই বনের ছায়া সে তো অনেক দূর,
তারে হারিয়ে যাওয়া ফাগুনেরে ফিরে কেন চাইতে বল ?
একদা সুরে সুরে দিত যে হৃদয় ভরে
দেখ তার গানের বীণা ধুলায় পড়ে।
আজ সব হারানোর নীরব ব্যথায় কাঁদে গো যার প্রাণ,
বলো ওগো কেমন করে গাইবে সে তার গান,
মিছে ফাগুন বেলার হাসিতে তার সুরের ভুবন ছাইতে বল।
www.youtube.com/watch?v=qOP1Ym9yV0c
৫.
ওগো কাজলনয়না হরিণী, তুমি দাও না ও দু’টি আঁখি
ওগো গোলাপ পাপড়ি মেলো না, তার অধরে তোমাকে রাখি।।
ওগো কাঞ্চনবর্ণা চম্পক মঞ্জরী করো তাকে চম্পকবর্ণা
এসো উচ্ছল ঝর্ণা অকারণ উল্লাসে হাসি হয়ে তার ঝরে’ পড়্ না
ওগো নিবিড় পুঞ্জ মেঘ দিগন্ত হতে এসো মেঘকালো কুন্তল ললনা
এসো অপরূপ চন্দ্রিমা পূর্ণিমা জোছনা ঝর না আননে তার ঝর্ না
ওগো মযূর পেখম তোলো না, তার লজ্জা তোমাতে ঢাকি।।
ওগো কুঞ্জ কোকিল এসো পঞ্চম সুর দিয়ে কোকিলকন্ঠী তাকে কর্ না
এসো অশান্ত সমীরণ দাও দোল দাও দোল ছন্দে ছন্দে তাকে ধর্ না
ওগো যৌবনবন্যা লীলায়িত রঙ্গে কানায় কানায় তাকে ভর্ না
এসো অনন্ত জগতের যত রূপ লাবণি তার রূপে সাধ করে মর্ না
এসো আমার মনের মাধুরী, তার স্বপ্ন তোমাতে আঁকি।।
www.youtube.com/watch?v=yeVzjU5goNI
৬.
এই কি পৃথিবী সেই।
যেথায় আশার আলো ছলনা করে
চোখের পাতায় কান্না যে শুধু ঝরে
তবু কি মমতা পৃথিবীর বুকে নেই।।
উপরে আলোর দুরন্ত শুদু খেলা
নিচে মানুষের হাহাকার সারাবেলা
অন্তবিহীন ব্যথা শুধু ছড়াতেই।।
বোঝনি কি তুমি নিজেকে কাঁদাও নিজে
আঁধার যে রয় প্রদীপ শিখার নিচে।
কতদিন আর শুধে যেতে হবে দেনা
প্রাণের মূল্যে জীবনের বেচা-কেনা
অশ্রু সাগরে দু’টি চোখ ভরাতেই।।
৭.
ও আকাশ সোনা সোনা, এ মাটি সবুজ সবুজ
নতুন রঙের ছোঁয়ায় হৃদয় রেঙেছে,
আলোর জোয়ারে খুশির বাঁধ ভেঙেছে।।
এই আছি এই নেই আমি যেন পাখি মেলি পাখনা
সীমানার সীমা ছেড়ে যাই দূর প্রান্তে,
নীড় একা পড়ে থাক্ থাক্ না।
ও সকাল আলো আলো, এ শিশির ঝলমল।।
নতুন রঙের ছোঁয়ায় হৃদয় রেঙেছে,
আলোর জোয়ারে খুশির বাঁধ ভেঙেছে।।
যায় যদি যায় যাক এই মন হারিয়েই যাক না
নিষেধের বাধা নেই ওই নীল শূন্যের সব সীমা ছড়িয়ে যাক না।
এ বাতাস খুশি খুশি, ও পলাশ হাসি হাসি
নতুন রঙের ছোঁয়ায় হৃদয় রেঙেছে,
আলোর জোয়ারে খুশির বাঁধ ভেঙেছে।।
৮.
অশ্রুতে মোর কান্নাতে মোর রুদ্রবীণার রুক্ষলিখায় জাগো,
বাংলার ঘরে ঘরে আছ যারা মোর মতো ভাগ্যহত।।
পথ চলো তুমি, হোক্ না সে পথ সঙ্গীবিহীন একা
ভয় নেই জেনো সেই পথে তুমি বন্ধুর পাবে দেখা
আঁধারের বুকে তোমরা নিয়ত জ্বলো প্রদীপের মতো।।
দূর হতে শুধু আলেয়ার মতো ভেবেছ তুমি গো যারে,
হয়তো সে আলো জীবনে তোমার দীপ জ্বেলে দিতে পারে।
স্বপ্নের নীড় বৈশাখী ঝড়ে হয়তো বিলীন হবে
চলার এ পথে সেই তো তোমার সঞ্চয় হয়ে রবে
মিথ্যার কাছে সত্য যা কিছু কখনো হবে না নত।।
এক গোছা রজনীগন্ধা হাতে দিয়ে বললাম, চললাম।।
বেশ কিছু সময় তো থাকলাম্, ডাকলাম, মন রাখলাম
দেখলাম দু’টি চোখে বৃষ্টি, বৃষ্টি ভেজা দৃষ্টি
মনে কর আমি এক মৃত কোনো জোনাকী
সারারাত আলো দিয়ে জ্বললাম।।
এখানেই সব কিছু শেষ নয় বেশ নয় যদি মনে হয়
লিখে নিও গল্পের শেষটা, থাক্ না তবু রেশটা
দেখো না গো চেয়ে তুমি আনমনা চরণে
কোন্ ফুল ভুল করে দললাম।।
১০.
সবাই চলে গেছে
শুধু একটি মাধবী তুমি এখনোতো ঠিকই ফুটে আছ
কেন?
কত আর চেয়ে চেয়ে দেখে যাবে আমায়
চোখের জলের একাকার।।
হাওয়া নেই, রাত নেই, হায়-
দিনও যে মেঘে ঢেকে গেছে,
শুধু একরাশ ব্যথা রেখে গেছে
এখন, একটি মাধবী তুমি তোমার চোখের করুণা দিয়ে
আজ কতটুকু ভরাবে বলো?
একা একা বেশ আছি কেউ নেই
তাই, কারো তরে অজস্র চিন্তার ঢেউ নেই।
তুমিও যদি চাও আজ আমাকে ছেড়ে যেতে পার
আমি চাই যে একেলা হতে আরো
এখন একটি মাধবী তুমি তোমার অসীম করুণা দিয়ে
আর মায়াভরা বাঁধনে বেঁধো নাকো আর।।