সুমন চট্টোপাধ্যায়
দ্বিতীয়ত:, আমি তোমাকে চাই
তৃতীয়ত:, আমি তোমাকে চাই
শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই।।
নিঝুম অন্ধকারে তোমাকে চাই
রাতভোর হলে আমি তোমাকে চাই
সকালের কৈশোরে তোমাকে চাই
সন্ধের অবকাশে তোমাকে চাই।।
বৈশাখী ঝড়ে আমি তোমাকে চাই
আষাঢ়ের মেঘে আমি তোমাকে চাই
শ্রাবণে শ্রাবণে আমি তোমাকে চাই
অকালবোধনে আমি তোমাকে চাই।।
কবেকার কলকাতা শহরের পথে
পুরোনো নতুন মুখ ঘরে ইমারতে
অগুন্তি মানুষের ক্লান্ত মিছিলে
অচেনা ছুটির ছোঁয়া তুমি এনে দিলে
নাগরিক ক্লান্তিতে তোমাকে চাই
এক ফোঁটা শান্তিতে তোমাকে চাই
বহুদূর হেঁটে এসে তোমাকে চাই
এ জীবন ভালোবেসে তোমাকে চাই।।
চৌরাস্তার মোড়ে পার্কে দোকানে
শহরে গঞ্জে গ্রামে এখানে ওখানে
স্টেশন টার্মিনাস ঘাটে বন্দরে
অচেনা ড্রয়িংরুমে চেনা অন্দরে
বালিশ তোশক কাঁথা পুরোনো চাদরে
ঠান্ডা শীতের রাতে লেপের আদরে
কড়িকাঠে চৌকাঠে মাদুরে পাপোশে
হাসি রাগ অভিমানে ঝগড়া আপোসে
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই, তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই
ডাইনে ও বাঁয়ে আমি তোমাকে চাই
দেখা না দেখায় আমি তোমাকে চাই
না-বলা কথায় আমি তোমাকে চাই।।
শীর্ষেন্দুর কোন নতুন নভেলে
হঠাত্ পড়তে বসা আবোলতাবোলে
অবোধ্য কবিতায় ঠুংরি খেয়ালে
স্লোগানে স্লোগানে ঢাকা দেয়ালে দেয়ালে।।
সলিল চৌধুরীর ফেলে আসা গানে
চৌরাশিয়ার বাঁশি মুখরিত প্রাণে
ভুলে যাওয়া হিমাংশু দত্তর সুরে
কোন্ কবেকার অনুরোধের আসরে
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই, তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
অনুরোধে মিনতিতে তোমাকে চাই
বেদনার আর্তিতে তোমাকে চাই
দাবীদাওয়া চাহিদায় তোমাকে চাই
লজ্জাদ্বিধায় আমি তোমাকে চাই
অধিকার বুঝে নেওয়া প্রখর দাবীতে
সারারাত জেগে আঁকা লড়াকু ছবিতে
ছিপছিপে কবিতার ছন্দে ভাষায়
গদ্যের যুক্তিতে বাঁচার আশায়
শ্রেণীহীন সমাজের চির বাসনায়
দিনবদলের খিদে ভরা চেতনায়
দ্বিধাদ্বন্দের দিন ঘোচার স্বপ্নে
সাম্যবাদের গান ঘুমে জাগরণে
বিক্ষোভে বিপ্লবে তোমাকে চাই
ভীষণ অসম্ভবে তোমাকে চাই
শান্তি অশান্তিতে তোমাকে চাই
এই বিভ্রান্তিতে তোমাকে চাই।।
at 9:56 AM Labels: সুমন চট্টোপাধ্যায় 0 comments
হজমি খেলে হজম হবে এই ভেবে কেউ হজমি খায়
খেতে ভীষণ ভাল্লাগে তাই পেটুক খালি হজমি চায়
ফুচকা খেলে পেট ভরে না তেঁতুল জলের আহ্বানে
মন চলে যায় বিকেলবেলা ফুচওয়ালার সন্ধানে
বাব্ল্গামের বুদ্বুদটা তৈরী করা শক্ত খুব
সেইজন্য কি বাব্ল্ খালি মুখের ভেতর দিচ্ছে ডুব
বাদামতক্তি আমার ভক্তি তিলের নাড়ু পেলেই খাই
জয়নগরের মোয়াও কিন্তু সময়মত আমার চাই
ললিপপের রাংতাটাকে কায়দা ক’রে খোলার পর
মুখের ভেতর মিষ্টিটাকে আয়েশ ক’রে জব্দ কর
চকলেটে আর চিকলেটে কি লেট করে কেউ এমনিতে
কেউ কি পারে – কেউ কি পারে ইচ্ছে ক’রে কম নিতে
প্রজাপতি বিস্কুটটাও ভালৈ লাগে কামড়াতে
চাটনি জমে দিব্যি ভালো কামরাঙা আর আমড়াতে
আমসজ্জ্বের মাহাত্ম্যটা টকমিষ্টির টাক্রাতে
চাটনি যখন বললে তখন মেশাও আলুবখরাতে
সুকুমারের পদ্য প’ড়ে পাচ্ছি মুখে মিষ্টি সুর
ছন্দে কথায় ডাকছে আমায় পাঁউরুটি আর ঝোলাগুড়৷
সারারাত জ্বলেছে নিবিড় - সুমন চট্টোপাধ্যায়
at 9:55 AM Labels: সুমন চট্টোপাধ্যায় 0 comments
সারারাত জ্বলেছে নিবিড়
ধুসর নীলাভ এক তারা
তারই কিছু রং নাও তুমি
তারই কিছু রং নাও তুমি
শহরে জোনাকি জ্বলে না নয়তো
কুড়োতাম সে আগুন নীল হয়তো
যা কিছু নেই
নাই বা হল সব পাওয়া
না পাওয়ার রঙ নাও তুমি
না পাওয়ার রঙ নাও তুমি
বড় বেরঙীন আজকাল
কাছাকাছি
কোন রঙ পাইনা,
তাই দিতে পারি না কিছু
কিছুই রাঙানো হল না নয়তো
আগামীর রঙে ছোপাতাম হয়তো
এই মলিন আর এ ধুসর পথ চাওয়া
এ চাওয়ার রঙ নাও তুমি
আগামীর রঙ নাও তুমি
মন আমার - সুমন চট্টোপাধ্যায়
at 9:54 AM Labels: সুমন চট্টোপাধ্যায় 0 comments
তোমার কথা শুনতে ভালো লাগে বন্ধুরা বলে
শোনায় তোমার কথা আমায় প্রায়ই
তাই শুনলাম তোমার কথা, গান শোনার ছলে
শুনলাম তোমাকে তাই
অনেক কথা কতো কথা কথো-কথার সুরে
ভরে গেলো ভেতরটা আমার
ইচ্ছে হলো বলতে কথা সুরের তালে তালে
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার
মন আমার… মন আমার… মন আমার…
মিথ্যে কথায় হারিয়ে যাওয়া ব্যর্থ এ বাজারে
অর্থ নিয়ে এলো তোমার গান
গানের ভাষা নতুন আশায় উঠলো নেচে তোমার কথায়
উঠলো নেচে অনেকের প্রাণ
সত্যি কথা সহজ করে বলার সাহস পেলাম ফিরে
কোথায় যেনো ভেতরে আমার
কথার নেশা ছড়িয়ে দেবার ইচ্ছেটা যে হলো আমার
ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার
মন আমার… মন আমার… মন আমার…
গানের কোনো প্রস্তুতি নেই, নেই যে শেকড়-বাকড়
পালকোশ কি পিলু ভৈরবী
গলায় আমার নেই যে কোনো রেওয়াজ করার স্বভাব
এই অভাব আমার থাকবে চিরদিন
আমার শুধু ছিলো আছে কাঠখোট্টা বাস্তবটা
দিবারাত্রি আপোষ আর আপোষ
রবীন্দ্র কি গণসংগীত কোনোটাই ঠিক দিচ্ছিলো না
বুকের ভেতর রেগে উঠার রোষ
গানটা আমার গাইবার এই ইচ্ছেটা যে ছিলো নাকো
কানটা ছিলো শুধু শোনার
অভ্যেসটা ছিলো কথার তালে কথার জবাব দেবার
কথা কেড়ে নেবার স্বভাব
তোমার কথার সূত্র ধরে পথ হারিয়ে নতুন করে
ইচ্ছে হলো কথাটা বলার
কথায় কথা বাড়ে, তাই বলছি ছোট্ট করে
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার
মন আমার… মন আমার… মন আমার…
তোমার কথা শুনতে ভালো লাগে বন্ধুরা বলে
শোনায় তোমার কথা আমায় প্রায়ই
তাই শুনলাম তোমার কথা, গান শোনার ছলে
শুনলাম তোমাকে চাই
অনেক কথা কতো কথা কথো-কথার সুরে
ভরে গেলো ভেতরটা আমার
ইচ্ছে হলো বলতে কথা সুরের তালে তালে
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার
মন আমার… মন আমার… মন আমার…
ফেলুদার গান - সুমন চট্টোপাধ্যায়
at 9:53 AM Labels: সুমন চট্টোপাধ্যায় 0 comments
বুদ্ধি আমার শাণিয়ে নেওয়া
কিছুই দৃষ্টি এড়ায় না
এদিক ওদিক বেড়ায় তবু
ভুলের পাড়া বেড়ায় না
দার্জিলিঙে, রাজস্থানে
গণ্ডগোলে, গ্যাঙটকে
খুনখারাপী ধরতে ছুটি
লোভীর লালা লকলকে
গল্পে তিনি ভালৈ ছিলেন
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরত্, শীত
আমার গল্প সঙ্গে নিয়ে
চলে গেলেন সত্যজিত্
তপেশ আমার সঙ্গী ছিলো
সঙ্গী ছিলেন লালমোহন
বয়স একটু বাড়তি হলেও
কম ছিল না টাটকা মন
উটের পিঠে সওয়ার হয়ে
নাস্তানাবুদ হলেন খুব
লালমোহনের কলমখানা
অনেক লিখে এখন চুপ
গল্পে তিনি ভালৈ ছিলেন
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরত্, শীত
জটায়ুকে সঙ্গে নিয়ে
চলে গেলেন সত্যজিত্
অনেক দেখা, অনেক জানা
অনেক কিছু করার পর
স্মৃতির মধ্যে থমকে থাকা
আমার পক্ষে কষ্টকর
লালমোহন আর তোপসেটারও
একই দশা দেখতে পাই
ইচ্ছে করে সবাই মিলে
নতুন কিছু গড়তে যাই
তখন আবার গল্প হবে
রহস্যতে ভর করে
ছুটবে আবার কল্পনাটা
সত্যজিতের পথ ধরে৷৷
বাঁশুরিয়া বাজাও বাঁশী দেখি না তোমায় - সুমন চট্টোপাধ্যায়
at 9:52 AM Labels: সুমন চট্টোপাধ্যায় 0 comments
বাঁশুরিয়া বাজাও বাঁশী দেখি না তোমায়
গেয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়
এ শহরে এসছো তুমি কবে কোন রাজ্য থেকে
তোমাদের দেশে বুঝি সব মানুষই বাঁশী শেখে
আমাদের স্কুল কলেজে শেখে লোকে লেখা পড়া
প্রাণে গান নাই মিছে তাই রবি ঠাকুর মূর্তি গড়া
তোমার ঐ দেহাতি গান দোলে যখন বাঁশির মুখে
আমাদের নকল ভণ্ড কৃষ্টি চালায় করাট বুকে
বুকে আর গলায় আমার শহর কোলকাতায়
গেয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়
ঠেলা ভ্যান চালাও তুমি কিম্বা ভারা গাড়ির ক্লিনার
কবছরে একবার যাও তোমার দেশের নদীর কিনার
ফাক পেলে বাঁশী বাজাও ফেলে আসা ঘরের ডাকে
দেশে গিয়ে এমন সুরে হয়তো ডাকো কোলকাতাকে
ফিরে এসে উদম খাটো গায়ে গতরে ব্যস্ত হাতে
মজুরিতে ভাগ বসাচ্ছে কারা তোমার কোলকাতাতে
তাদেরই গাইয়ে তুমি সাজানো জলসায়
গেয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়
বনফুলে ঘুরে ঘুরে প্রজাপতি ক্লান্ত যখন - সুমন চট্টোপাধ্যায়
at 9:51 AM Labels: সুমন চট্টোপাধ্যায় 0 comments
বনফুলে ঘুরে ঘুরে প্রজাপতি ক্লান্ত যখন
শুঁয়োপোকা থামে যেই চেনা চেনা গাছের গুঁড়িতে
তখন বিকেল দেয় সন্ধের আল ধরে হানা
গোধুলি আঙুল রাখে আলগোছে পথের ধুলিতে
ব্যস্ত পর্যটক পিঁপড়ের সফর ফুরোয়
বটগাছে গুটিপোকা গুটিসুটি মারে একা একা
রোদ্দুর ঘেঁটে ঘেঁটে শেষমেষ শরীর জুড়োয়
গোধুলির আবছায়া ছুঁয়ে ছুঁয়ে সুবর্ণরেখা
দিনের আওয়াজ যেই ঝিঁঝির কোরাসে মিশে যায়
হঠাত্ জেনারেটর ওগরায় শব্দদূষণ
টুরিস্ট লজের থেকে কাজ করে ফেরে সাওঁতাল
এই পথে একা একা হাঁটতেন বিভূতিভূষণ৷
পেটকাটি চাঁদিয়াল - সুমন চট্টোপাধ্যায়
at 9:50 AM Labels: সুমন চট্টোপাধ্যায় 1 comments
পেটকাটি চাঁদিয়াল মোমবাতি বগ্গা
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক, মাটিতে অবজ্ঞা।
বয়স বারো কি তেরো, রিকশা চালাচ্ছে,
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক ছেলেটাকে ডাকছে।
বয়স বারো কি তেরো, বড়জোর চোদ্দ,
রিক্শা চালাতে শিখে নিয়েছে সে সদ্য।
ছেলেটার মন নেই প্যাডেলে বা চাক্কায়,
ঐ তো লেগেছে প্যাঁচ চাঁদিয়াল বগ্গায়।
শান্ দেওয়া মানজায়, বগ্গা ভো কাট্টা।
ছেলেটা চেঁচিয়ে ওঠে “এই নিয়ে আটটা”।
সওয়ার বাবুটি ভাবে, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
বিচ্ছু ছোঁড়াটা বড় আস্তে চালাচ্ছে।
“ওই ছোঁড়া, আরে ওই ছোঁড়া ম’ল যা
আট্টা তো তোর কি ?”
সওয়ার বাবুটি দেন রেগে মেগে হুমকি।
বাবুর খ্যাঁকানি শুনে সম্বিত্ ফিরে পায়
ছেলেটা যে করে হোক রিক্শা চালিয়ে যায়।
এ কিশোর পারবে কি এই বোঝা টানতে ?
এই বাবু কোনো দিন পারবে কি জানতে ?
যে ছেলেটা প্রাণপণে রিক্শা চালাচ্ছে,
মুক্তির ঘুড়ি তাকে খবর পাঠাচ্ছে।
পেটকাটি চাঁদিয়াল মোমবাতি বগ্গা
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক, মাটিতে অবজ্ঞা।
পেটকাটি চাঁদিয়াল…
দুচোখ বুজে যাও কিছু চেয়ে দেখোনা - সুমন চট্টোপাধ্যায়
at 9:48 AM Labels: সুমন চট্টোপাধ্যায় 0 comments
দুচোখ বুজে যাও কিছু চেয়ে দেখোনা৷
দুকান বুজে যাও কিছু শুনে দেখোনা৷
কত কী করছে লোকে, কত কী বলছে লোকে -
যাও ভুলে যাও কিছু মনে রেখোনা৷
মনে রাখা বিপদ বড় – কথায় কথায় মনে পড়ে৷
সেদিন ঐ ওপাড়াতে কে যেন গেছে মরে৷
কিভাবে মরে গেছে চেয়ে যদি দেখেই থাক
অথবা পথের ধারে আচমকা শুনেই থাক -
সে ছিল তোমার আমার মতই একটা দিব্যি মানুষ
ছিল তার ছেলেমেয়ে, বিছানায় মেয়েমানুষ৷
ছিল তার একটা মাথা, দুটো হাত আর দুখানি পা
ময়লা জামাকাপড় কেচে দিত পাড়ার ধোপা৷
খিদে পেলে খিদে পেত তোমার আমার মতই তারও
মিল ছিল আরো অনেক – গোঁজামিলও বলতে পারো৷
এরই মাঝে একটা অমিল – ভীষণ রকম অমিল ছিল৷
মাস দুই আগে হঠাত্ লোকটার চাকরি গেল৷
ফলে কি হল জান?
না জেন না, না জেন না,
জানলে লোকে বলবে কি?
‘লোকে খাচ্ছে না’ ভাবলে গরম ভাতে ঘি
কি করে চটকাবে আর -
কে খাবে তোমার খাবার!
না জেননা জানলে লোকে বলবে কি?
তোমাকে চাই - সুমন চট্টোপাধ্যায়
at 9:46 AM Labels: সুমন চট্টোপাধ্যায় 0 comments
প্রথমত:, আমি তোমাকে চাই
দ্বিতীয়ত:, আমি তোমাকে চাই
তৃতীয়ত:, আমি তোমাকে চাই
শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই
নিঝুম অন্ধকারে তোমাকে চাই
রাতভোর হলে আমি তোমাকে চাই
সকালের কৈশোরে তোমাকে চাই
সন্ধের অবকাশে তোমাকে চাই
বৈশাখী ঝড়ে আমি তোমাকে চাই
আষাঢ়ের মেঘে আমি তোমাকে চাই
শ্রাবণে শ্রাবণে আমি তোমাকে চাই
অকালবোধনে আমি তোমাকে চাই
কবেকার কলকাতা শহরের পথে
পুরোনো নতুন মুখ ঘরে ইমারতে
অগুন্তি মানুষের ক্লান্ত মিছিলে
অচেনা ছুটির ছোঁয়া তুমি এনে দিলে
নাগরিক ক্লান্তিতে তোমাকে চাই
এক ফোঁটা শান্তিতে তোমাকে চাই
বহুদূর হেঁটে এসে তোমাকে চাই
এ জীবন ভালোবেসে তোমাকে চাই
চৌরাস্তার মোড়ে পার্কে দোকানে
শহরে গঞ্জে গ্রামে এখানে ওখানে
স্টেশন টার্মিনাস ঘাটে বন্দরে
অচেনা ড্রয়িংরুমে চেনা অন্দরে
বালিশ তোশক কাঁথা পুরোনো চাদরে
ঠান্ডা শীতের রাতে লেপের আদরে
কড়িকাঠে চৌকাঠে মাদুরে পাপোশে
হাসি রাগ অভিমানে ঝগড়া আপোসে
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই, তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই
ডাইনে ও বাঁয়ে আমি তোমাকে চাই
দেখা না দেখায় আমি তোমাকে চাই
না-বলা কথায় আমি তোমাকে চাই
শীর্ষেন্দুর কোন নতুন নভেলে
হঠাত্ পড়তে বসা আবোলতাবোলে
অবোধ্য কবিতায় ঠুংরি খেয়ালে
স্লোগানে স্লোগানে ঢাকা দেয়ালে দেয়ালে
সলিল চৌধুরীর ফেলে আসা গানে
চৌরাশিয়ার বাঁশি মুখরিত প্রাণে
ভুলে যাওয়া হিমাংশু দত্তর সুরে
কোন্ কবেকার অনুরোধের আসরে
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই, তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
অনুরোধে মিনতিতে তোমাকে চাই
বেদনার আর্তিতে তোমাকে চাই
দাবীদাওয়া চাহিদায় তোমাকে চাই
লজ্জাদ্বিধায় আমি তোমাকে চাই
অধিকার বুঝে নেওয়া প্রখর দাবীতে
সারারাত জেগে আঁকা লড়াকু ছবিতে
ছিপছিপে কবিতার ছন্দে ভাষায়
গদ্যের যুক্তিতে বাঁচার আশায়
শ্রেণীহীন সমাজের চির বাসনায়
দিনবদলের খিদে ভরা চেতনায়
দ্বিধাদ্বন্দের দিন ঘোচার স্বপ্নে
সাম্যবাদের গান ঘুমে জাগরণে
বিক্ষোভে বিপ্লবে তোমাকে চাই
ভীষণ অসম্ভবে তোমাকে চাই
শান্তি অশান্তিতে তোমাকে চাই
এই বিভ্রান্তিতে তোমাকে চাই
জাতিস্মর - সুমন চট্টোপাধ্যায়
at 9:31 AM Labels: সুমন চট্টোপাধ্যায় 0 comments
অমরত্মের প্রত্যাশা নেই নেই কোন দাবি দাওয়া
এই নস্সর জীবনের মানে শুধু তোমাকে চাওয়া
মুহূর্ত যায় জন্মের মতো অন্ধ জাতিস্মর
গত জন্মের ভুলে যাওয়া স্মৃতি বিস্মৃত অক্ষর
ছেড়া তাল পাতা পুঁথির পাতায় নিঃস্বাস ফেলে হাওয়া
এই নস্সর জীবনের মানে শুধু তোমাকেই চাওয়া
কাল-কেউটের ফনায় নাচছে লখিন্দরের স্মৃতি
বেহুলা কখনো বিধবা হয় না এটা বাংলার রীতি
ভেসে যায় ভেলা এবেলা ওবেলা একই সব দেহ নিয়ে
আগেও মরেছি আবার মরবো প্রেমের দিব্যি দিয়ে
জন্মেছি আমি আগেও অনেক মরেছি তোমারই কোলে
মুক্তি পাইনি শুধু তোমাকে আবার দেখবো বলে
বার বার ফিরে এসেছি আমরা এই পৃথিবীর টানে
কখনো গাঙড় কখনো কো পাই কপোতাক্ষর গানে
গাঙড় হয়েছে কখনো কাবেড়ি কখনো বা মিসিসিপি
কখনো রাইন কখনো কঙ্গো নদীদের স্বরলিপি
স্বরলিপি আমি আগেও লিখিনি এখনও লিখিনা তাই
মুখে মুখে ফেরা মানুষের গানে শুধু তোমাকেই চাই
তোমাকে চেয়েছি ছিলাম যখন অনেক জন্ম আগে
তথাগততার নিঃস্বংগতা দিলেম অস্তরাগে
তারই করুনায় ভিখারিনি তুমি হয়েছিলে একা একা
আমিও কাঙাল হলাম আরেক কাঙালের পেতে দেখা
নতজানু হয়ে ছিলাম তখন এখনো যেমন আছি
মাধুকরী হও নয়নমোহিনী স্বপ্নের কাছাকাছি
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড কর প্রেমের পদ্যটাই
বিদ্রোহ আর চুমুর দিব্যি শুধু তোমাকেই চাই
আমার স্বপ্নে বিভোর হয়েই জন্মেছ বহুবার
আমি ছিলাম তোমার কামনা বিদ্রোহ চি]কার
দুঃখ পেয়েছ যতবার জেনো আমায় পেয়েছ তুমি
আমি তোমার পুরুষ আমি তোমার জন্মভূমি
যতবার তুমি জননী হয়েছ ততবার আমি পিতা
কতো সন্তান জ্বালালো প্রেয়সি তোমার আমার চিতা
বার বার আসি আমরা দুজন বার বার ফিরে যাই
আবার আসবো আবার বলবো শুধু তোমাকে চাই
ছুটল ছুটিতে দূরপাল্লার ট্রেন - সুমন চট্টোপাধ্যায়
at 9:26 AM Labels: সুমন চট্টোপাধ্যায় 0 comments
ছুটল ছুটিতে দূরপাল্লার ট্রেন
ছুটতে ছুটতে এসে গেল আশ্বিন
আগে আর পরে ছোটাছুটি ছোটাছুটি
মাঝখানে কিছু ছুটি কাটাবার দিন
ছুটির ঘুড়িটা ছুটির আকাশে ওড়ে
ঘুড়িতে ঘুড়িতে ছুটির লড়াই লাগে
ছুটির মাঞ্জা পাঞ্জা লড়তে এলো
দেখি কার ঘুড়ি ছুটি পেয়ে যায় আগে৷
ছুটির পাখীটা ছটফট করে রোজ
খাঁচায় বন্দী পালাতে পারে না তাই
দানাপানি তুমি যতই দাওনা তাকে
পাখীর কিন্তু ছুটির আকাশ চাই৷
ভোরের মাটিতে শিউলিফুলের ছুটি
মেটে রং ডাকে সবুজকে আয় আয়
রংগুলো হয় একাকার ছুটি পেলে
ঘাসে সবুজ রোদ্দুরে মিশে যায়
রোদ্দুরে ছুটি পেয়ে গেল প্রজাপতি -
যেখানে ইচ্ছে, যতবার খুশি ঘোরে
ডানায় ডানায় খুশির দিগ্বিজয় দিগ্বিজয়
রঙে আর রঙে ছুটির নিশান ওড়ে৷
ছুটির পাখীটা …
বছর খানেক চাকরি বাকরি করে
(…?) জেঠু নিয়েছেন অবসর
দূরদর্শনে দেখছেন ছুটি ছুটি
পেয়েছেন ছুটি অনেক বছর পর
মনে পড়ে তাঁর আরেক জনের কথা
ধিতাং ধিতাং বোলের ছন্দে সুরে
ছরিয়ে দিলেন গানের অজস্রতা
কাটা ছিল তাঁর টিকিট অনেক দূরে
কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায় - সুমন চট্টোপাধ্যায়
at 9:25 AM Labels: সুমন চট্টোপাধ্যায় 0 comments
কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়
কতটা পথ পেরোলে পাখি জিরোবে তার দায়
কতটা অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায়
প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও জানা।।
কত বছর পাহাড় বাঁচে ভেঙেগ যাবার আগে
কত বছর মানুষ বাঁচে পায়ে শিকল পড়ে
ক’বার তুমি অন্ধ সেজে থাকার অনুরাগে
বলবে তুমি দেখছিলে না তেমন ভালো করে।।
কত হাজার বারের পর আকাশ দেখা যাবে
কতটা কান পাতলে পরে কান্না শোনা যাবে
কত হাজার মরলে তবে মানবে তুমি শেষে,
বড্ড বেশী মানুষ গেছে বানের জলে ভেসে ।।
কখনও সময় আসে জীবন মুচকি হাসে - সুমন চট্টোপাধ্যায়
at 9:24 AM Labels: সুমন চট্টোপাধ্যায় 0 comments
কখনও সময় আসে জীবন মুচকি হাসে
ঠিক যেন প’ড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা
অনেক দিনের পর মিলে যাবে অবসর
আশা রাখি পেয়ে যাবো বাকি দু-আনা৷
আশা নিয়ে ঘর করি
আশায় পকেট ভ’রি
প’ড়ে গেছে কোন্ ফাঁকে চেনা আধুলি
হিসেব মেলানো ভার
আয়-ব্যয় একাকার
চ’লে গেল সারাদিন এল গোধূলি
সন্ধে নেবে লুটে
অনেকটা চেটেপুটে
অন্ধকারের তবু আছে সীমানা
সীমানা পেরোতে চাই
জীবনের গান গাই
আশা রাখি পেয়ে যাবো বাকি দু-আনা৷
এক ধরণের বিদ্রোহ হল কবিতা - সুমন চট্টোপাধ্যায়
at 9:24 AM Labels: সুমন চট্টোপাধ্যায় 0 comments
এক ধরণের বিদ্রোহ হল কবিতা
এক ধরনের বিদ্রোহ হল গান
পৃথিবীর যত ফয়দা লোটার যন্ত্র
করে দিতে চাই ভেঙেচুরে খান খান৷৷
এক ধরনের বিদ্রোহ হল সৃষ্টি
এক ধরণের বিদ্রোহ আনে প্রাণ৷
নিষ্পাণ এই সর্বংসহা রাজ্যে
অন্তর্ঘাতি আমাদের এই গান৷৷
এক ধরণের বিদ্রোহ ভালবাসা
এক ধরনের বিদ্রোহ হল দাবী
উগ্র প্রেমের ছুরিতে দিচ্ছি শান
দখল করব জীবনের মৃগনাভি৷
শরীরে চলছে কামনার বিদ্রোহ
গেরিলার মত নির্ভীক তার চোখ
আমার স্পর্ধা তোমারই জীবনমুখি
আমার লড়াই এবার তোমার হোক৷
এক ধরণের বিদ্রোহ হল চৈত্র
বিদ্রোহে পড়ে দমকা চৈতি হাওয়া
নাচে বিদ্রোহে কালবৈশাখী ঝড়
তুফানে ওড়ায় মুমূর্ষু চাওয়া-পাওয়া৷
পরিবর্তন চাওয়াটাই বিদ্রোহ
ধ্বংসের দাবী সৃষ্টিতে উদ্বেল
কামনায় আজ আগুন লেগেছে দেখ,
ভাবনায় ফাটে মলোটভ ককটেল৷৷
আমার দুবাহু প্রসারিত করে সূর্যের কোন অঞ্চলে - সুমন চট্টোপাধ্যায়
at 9:23 AM Labels: সুমন চট্টোপাধ্যায় 0 comments
আমার দুবাহু প্রসারিত করে সূর্যের কোন অঞ্চলে
পাক খেয়ে নেচে অবশেষে এই শ্বেতাঙ্গ দিন শেষ হলে
শান্ত, শীতল সন্ধ্যে তন্বী গাছের ছায়াই ভালো
রাত্রি নামবে যখন, আহা, আমার মতন কালো৷
আমার দুবাহু প্রসারিত করে সূর্যের মুখে মুখে
নাচ ঘুরপাক দুরন্ত এই দিন গেলে শেষে চুকে
শান্ত, ধূসর সন্ধ্যে, আহা তন্বী সে এক গাছ
রাত্রি নেমেছে আমার মতই, কালোর চলেছে নাচ৷
আমাদের জন্য - সুমন চট্টোপাধ্যায়
at 9:22 AM Labels: সুমন চট্টোপাধ্যায় 0 comments
গড়িয়াহাটার মোড়, মিনি মিনি বাস বাস,
বাসের টারমিনাসে, মন মরা সারি সারি
মুখ চোখ নাক হাত, রোগা রোগা চেহারার কনডাক্টার
সব আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
চৌরঙ্গীর আলো এবং লোড শেডিং,
পার্ক স্ট্রীট জমকালো, কাগজে হেডিং।
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
বেদম ট্র্যাফিক জ্যাম, ঠান্ডা স্যালামি হ্যাম,
চকলেট, ক্যাডবেরি, মাদার ডেয়ারী,
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
বাজারের দরাদরি, রুটি ভাত তরকারি,
সা নি ধা পা মা গা রে সা মাদার টেরেসা,
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
কুঁয়াশা কুয়াশা কাদা, ভোর বেলা গলা সাধা,
সারেগা রেগামা গামা গামাপা মাপাধা পাধা পাধানি ধানিসা–
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
ফুটবোর্ডে ঝুলে যাওয়া, অথবা লেডিজ সীট-
তাক্ করে উদাসীন, আকাশ কুসুম টিক্ টিক্-
টিকিট কাটতে গিয়ে ব্যাজার মানুষ, খুচ্-খুচরো পয়সা নেই
আমাদেরই জন্য। নেই আমাদেরই জন্য।
সা গা পা ধানি ধানি পাধানি, সানিধা নিধা পাগা সাগা পাধানি,
বছরে তিরিশবার চিত্রাঙ্গদা আর শ্যামা
শাপ-মোচনের অশ্রু মোচন, আমাদেরই জন্য।
গাজনের ছয়লাপ, আধুনিক কিং খাপ,
কিং সাইজ ভজনের শিবের গাজন,
আমাদেরই জন্য।
সংস্কৃতির ঢাক, তে রে কে টে তাক্ তাক্
দমাদম দমাদম কৃষ্টি বিষম
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
পাতাল রেলের খাল, ভাঙাচোরা দিন কাল,
পদে পদে ঠোক্কোর, বকর বকর,
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
আপিস কাছারি রাইটার্স বিল্ডিং ডিং
বিনয় বাদল দিন্ দিনেশের নাম ধার,
ধর্মতলার মোড়ে লেন দেন নিন দিন লেনিন
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
সুনীল গাঙ্গুলীর দিস্তে দিস্তে লেখা,
কত কবি মরে গেল চুপি চুপি একা একা,
আমাদেরই জন্য। শুধু আমাদেরই জন্য।
সিনথেসাইজারের টাপুর টুপুর
সুমন চাটুজ্যের এক ঘেয়ে সুব
নয় আমাদেরই জন্য। নেই আমাদেরই জন্য।
সত্যজিতের ছবি, শক্তির পদ্য,
লিট্ল্ ম্যাগাজিনের লেখা অনবদ্য।
গ্রুপ থিয়েটার আর একাদেমি সমাচার,
একুশে আইন আর গণেশ পাইন।
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
কেরানী ও অফিসার পাটোয়ার নেতা,
ফুটপাথে ছোটো বড় ক্রেতা বিক্রেতা,
বেশ্যা দালাল, টিকিধারী পুরোহিত,
ট্যাকসি চালক আর পুলিশের খিট্ মিট্
আমাদেরই জন্য। সব আমাদেরই জন্য।
আমাদের জন্যেই ভোরের আকাশ,
লালচে পূবের কোণে আসে আশ্বাস।
আমাদের জন্যেই মিষ্টি সকাল,
নীলের গভীরে হাসে একা মহাকাল।
আমাদেরই জন্যেই বৃষ্টি এসেছে,
দারুণ প্রাণের টানে দুকুল ভেসেছে।
মৌমাছি খুঁজে মরে আমাদেরই মধু,
আকাশ ডাকছে আজ আমাদেরই শুধু।
সমুদ্রে ঢেউ ভাঙে আমাদেরই নামে,
শ্রমিকের দেহ ভেজে আমাদেরই ঘামে।
যে যেখানে লড়ে যায় আমাদেরই লড়া,
জীবনের কথা বলা গানের মহড়া যেন
সব্বার জন্যে, সব্বার জন্যে।
আমরাই কলকাতা আজ আগামীর,
আমরাই গান গাই আমির তুমির,
ইট কাঠ কংক্রীট শ্যাওলা ময়লা,
প্রতিটি নতুন গান মাসের পয়লা।
আমার জীবন থেকে উঠে আসা সুর
তোমাকে শুনিয়ে আমি যাব বহু দূর।
ফিরেও আসবো আমি তোমার সুবাসে,
থাকবো তোমার বুকে আর আসে পাশে।
আমাকে পড়লে মনে খুঁজো এইখানে,
এখানে খুঁজছি আমি জীবনের মানে।