শ্যামল মিত্র
তবু সেদিনের মতো লাগে নি তো কভু আর।
সেদিন আমার প্রথম ফাগুন বেলা
মাধবী শাখায় অনেক ফুলের মেলা----
সে ফাগুন আরও এসেছে যে বারে বার।।
তোমার প্রথম প্রেম রয়েছে আমার হৃদয় ভরে,
এ মন ভ্রমর সেথা যায় কেন বলো ওগো তারই তরে ?
সেদিনের সেই প্রথম গানের অলি
এখনও ফোটায় নতুন আশার কলি
সে গানের সুরে জেগেছি যে বারে বার।।
ঝিলিক মারে ঝিকিমিকি।
জ্বলছে এ বুকে যে
তুষের আগুন ধিকিধিকি।।
একি বলো সইতে পারি
তবু না কইতে পারি।
মিছে কি ভেবে মরি
ও মন পাবো ঠিকই।
এখনো তো আমি কি চাই
বুঝেও তুমি বোঝোনি কি।।
জানি না মনে মনে
কি যে তুমি ফন্দি করো।
নাহয় আমায় তুমি
ওই নজরে বন্দী করো।
তবু কি থাকবে সরে
দূরে কি রাখবে মোরে।
মনে হয় এবার আমি
আরো ভালোবাসতে শিখি।
এখনো তো আমি কি চাই
মনে মনে খোঁজোনি কি।।
জীবন খাতার প্রতি পাতায়
যতই লেখ হিসাব-নিকাশ
কিছুই রবে না।
লুকোচুরির এই যে খেলায়
প্রাণের যত দেয়া-নেয়া
পূর্ণ হবে না।।
কন্ঠ ভরা এ গান শুনে
ছুটে তুমি এলে দ্বারে
চোখে দেখে এতো করেও
চেননি কো কভু তারে
অবহেলায় সরে তবু
আমায় তুমি নাও গো ডেকে
সে তো করবে না।।
যে আঁখি গয়না খুশী
আকাশ ভরা তারা দেখে
সেই হাসি কাঁচের ঝারে
মোমের বাতি জ্বেলে রেখে।
জানি আমি আমারই নই
এ গান আমার ভালোবাসো
নিজের ভুলে পথের ধূলে
পরশ মানিক ফেলে আসো।
তোমার প্রেমের ওই ঠিকানায়
দেখে আমায় তবু কি গো
ডেকে লবে না।।
কথা - গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার
সুর ও শিল্পী - শ্যামল মিত্র
ছবি- দেয়া নেয়া
গানে ভুবন ভরিয়ে দেবে ভেবেছিল একটি পাখি
হঠাৎ বুকে বিধল যে তীর তার
স্বপ্ন দেখা হল ফাঁকি, তাই গান শোনাতে হায় কন্ঠ কেঁপে যায়
তারে হাসি মুখে যেতে দাও শেষ গান শুনে নাও
মনে রেখ মনে রেখ তার এই শেষ গান |
যার গান সুনে একদিন কন্ঠে পরালে মালা
আজ তোমাদের সভা হতে তার বিদায় নেবার পালা
ঝরে কত তারা অলখে মনে রাখে বলো কে
ছিল কত সুর বুকে তার জানিবে কে আর
মনে রেখো মনে রেখো এই শেষ গান |
ঝরে কত তারা আলোকে
মনে রাখো বলো কে
ছিল কত সুর বুকে তার
জানিবে না কেহ আর।
মনে রেখো, মনে রেখো,
তার এই শেষ গান।।
আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারাদিন
আজ ওই চোখে সাগরের নীল
আমি গাইছি, গান গাইছি
বুঝি মনে মনে হয়ে গেল মিল।।
কবরীতে ওই ঘন ঘন কনকচাঁপা
না বলা কথায় থর থর অধর ফাঁপা
তাই কি আকাশ হলো আজ
আলোয় আলোয় ঝিলমিল।।
এই যেন নয় গো প্রথম
তোমায় যে কত দেখেছি
স্বপ্নের তুলি দিয়ে তাই
তোমার সে ছবি এঁকেছি।
মৌমাছি আজ গুনগুন দোলায় পাখা
যেন এ হৃদয় রামধনু খুশীতে মাখা
তাই কি গানে সুরে আজ
ভরে আমায় রিনকিন।।
কথা- গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার
সুর ও শিল্পী- শ্যামল মিত্র
ছবি - আনন্দ আশ্রম
তিনটি মন্ত্র নিয়ে যাদের জীবন সত্যম্ শিবম্ সুন্দরম্
দুঃখের পৃথিবীটা তাদের কাছে এক আনন্দ আশ্রম |
সেই মানুষই আসল মানুষ, যার জীবন পরের তরে
রাজার মুকুট ছেড়ে হাসিমুখে, সেতো কাঁটার মুকুট পরে
ধূপ চিরদিনই গন্ধ বিলায় নীরবে সে জ্বলে মরে
পরের সেবায় সে হাসিমুখে নিজেকে ক্ষয় করে
তোমার সমাধি ফুলে ফুলে ঢাকা কে বলে আজ তুমি নাই
তুমি আছ মন বলে তাই তোমারই অমন নাম জয় গৌরবে |
স্মরণে যে চিরদিন জানি লেখা রবে মরণে হারাতে তোমাকে যেন পাই
তোমার জীবন যেন কাহিনীর মত, হে বিজয়ী বীর ছিল জয় তব ব্রত
ধূপেরই মত যেন মরণে সুখে, তোমার জীবন তুমি দিলে হাসি মুখে
এ কথা কখন যেন না ভুলে যাই |
কথা- গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার
শিল্পী- শ্যামল মিত্র
ছবি - সাগরিকা
আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে সাত সাগর আর তের নদীর পাড়ে
ময়ূর পঙ্খী ভিড়িয়ে দিয়ে সেথা আমি দেখে এলাম তারে ----- সাত সাগর ---
সে এক রূপ কথারই দেশ ফাগুন সেথা হয় না কভু শেষ
তারারই ফুল পাপড়ি ঝড়ায় যেথায় পথের ধারে, সাত সাগর---
সেই এক রূপ কথারই দেশে যে রঙ আমি কুরিয়ে পেলাম প্রাণে
সুর হয়ে তাই ঝড়ে আমার গানে তাই খুশীর সীমা নাই
বুঝি বাতাসে তার মধুর ছোঁয়া পাই
জানি না আজ হৃদয় কোথায় হারাই বারে বারে | সাত সাগর---
যেমন শ্রীরাধা কাঁদে শ্যামের অনুরাগী
তেমন করে কাঁদি আমি পথের লাগি
কোথায় আছে সেই নিশানা বলতে কেগো পারে |
গোলক ধাঁধায় মরছি ঘুরে গহিন আঁধিয়ারে
পথকে আমার দোষর করে হয়েছি বিবাগি
জানিনা পথ চিনি নাতো কোথায় এসে মেশে
আঁধার ঘুরে সূর্য্যি কিগো উঠবে আবার হেসে
আমার ব্যথার সুজন কোথায় কে হবে সোহাগী
রাজার পঙ্খী উইড়া গেলে রাজা নতুন পঙ্খী বান্ধে
আর দুঃখীর পঙ্খী উইড়া গেলে দুঃখী শুন্য খাঁচায় কান্দেরে
সেই কান্না কেউ শোনে না চেনা মানুষ হয় অচেনা
ও তার পূর্ণিমাতে মন গগনে গেরন লাগে চান্দে রে
শূন্য খাঁচা শূন্য হৃদয় শূন্য দুঃখীর মন,
ভরা যৌবন তবু দুঃখীর শূন্য ত্রিভূবন
নীতি ধর্ম ভালোবাসা সবই যেন খেলার পাশা
ও তার জীবন যেন বন্দী হলো জুয়া খেলার ফান্দে |