শিলাজিৎ মজুমদার

আমি সেই হরিণটার কথা বলছিলাম
হরিণটা দৌড়চ্ছিল
আমিও— পেছন পেছন—-
কচি ঘাস মাড়িয়ে
শাল শিমূল ফার্ন গাছের
ফাঁক ফোকর দিয়ে
জংলা কাদা জলে ক্ষুর চুবিয়ে
ছিটকে ছিটকে দৌড়চ্ছিল হরিণটা
আমিও—- পেছন পেছন
শিং—এর মধ্যে অজানা অতেনা গুল্মলতা
পিঠের মধ্যে অর্জুন গাছের ঘষটানি
অসম্ভব পিপাসা
কিন্তু নিঃশব্দে
দৌড়চ্ছিল হরিণটা
আমিও পেছন পেছন
প্রায় চার ক্রোশ পথ পেরিয়ে
জঙ্গল ছাড়িয়ে
হঠাৎ একটা গোটা আকাশ দেখতে গেলে
হরিণটা
এতটা আকাশ দেখে
একটু সংশয়ে ইতি উতি তাকিয়ে
দাঁড়িয়ে পড়ল
থমকে
কিছুক্ষণ
তারপর আলতো আলতো পায়ে হরিণটা
হাঁটতে থাকল বালির ওপর দিয়ে
আমিও— পেছন পেছন
তারপর সে একটা মরুভূমি পেরোল
আমিও — পেছন পেছন
তারপর কয়েকটা পাহাড় ডিঙোল
তারপর পাঁচটা সমুদ্র
সাতাশটা নদী
অজস্র শহর
অসংখ্য গ্রাম
লক্ষ লক্ষ পুকুর
শতাধিক নদী
অনর্গল পেরোতে থাকল
এক একটা সীমান্ত
এক একটা দেশ
এক একটা কাঁটাতার
এক একটা শীত
এক একটা বসন্ত
এক একটা মনুমেন্ট
শহিদ বেদি—- দেওয়াল ম্যাগাজিন
মিউজিয়াম—বিউটি পার্লার
থিয়েটার হল— নিষিদ্ধ পল্লি
ফুটপাথ—হাইওয়ে
ওষুধের দোকান— চা বাগান
মালভূমি —মালটিপ্লেক্স
পেরিয়ে হরিণটা আবার দাঁড়াল
কয়েক মুহূর্ত
আমিও — পেছন পেছন
তারপর হঠাৎ পেছন ফিরল হরিণটা
আমাকে সে দেখতে পেল না
সেটা তো আগে ভাগেই ঠিক করা ছিল
পেছনে তাকিয়ে
পড়ন্ত বিকেলে
সে দেখতে পেল নিজের ছায়াটা
তখনও লেপ্টে আছে তার সঙ্গে
এই প্রথম হরিণটা বিষণ্ণ হল
অবসন্ন হল
তারপর টলতে টলতে
হুমড়ি খেয়ে পড়ল নিজের ছায়ার ওপর
আমিও—- পেছন পেছন
বেসামাল হয়ে পড়লাম
ঝুপ করে— আমার ছায়ার ওপর
তারপর যখন চোখ খুলল
ঘুম ভাঙল
দেখলাম আপনি আমার
মুখের খুব কাছাকাছি
ঝুঁকে পড়ে জিজ্ঞাসা করছেন
‘কী বলছিলে ?’
তখনই আমি বললাম—
আমি সেই হরিণটার কথা বলছিলাম | 
 
 
 
 
 

আমিই তো তোমাকে বসুন্ধরার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছি
সোনাদাদের বাড়ির বাইরের দিকে পোড়ো চানঘর
তার ছাদের ওপর ডুমুর গাছের বাস
নগেন বলে একটা ছেলে একটা প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটে
ভর্তি করছিল ডুমুর
সবে তখন বাচ্চা পেড়েছিল সাদা হলদে বেড়ালটা
আমি আলাপ করাইনি ?
আমিই তো তোমাকে ডেকেছিলাম
জানালার শিকের ওপর হুমড়ি খেতে বাধ্য করেছিলাম |
কাজলকাকুর বাবার গরুটার নাম লক্ষ্মী
ঐ ডুমুর গাছের ফাঁক দিয়ে
এক চিলতে জংলা মাঠের ওপর
গর্ভবতী লক্ষ্মী প্ল্যাসেন্টা
আস্তে আস্তে বাছুরটা ভুমিষ্ট হল
উঠে দাঁড়াল
মা লক্ষ্মী চেটে খেল জীবাণু-বীজাণু

শ্যামপার্কে ছিটকে পড়ে গেলে
ছড়ে গেল হাঁটু
স্কুলের নীল প্যান্টটার ছিঁড়ে যাওয়া
ভয়—
কে ছিল তোমার সঙ্গে
গঙ্গা জলের নীচে পড়ে থাকা পল#2495;
সেই পলি তুলে পুতুল গড়ার ব্যর্থ চেষ্টা
বাথরুমের জং ধরা ফ্লাশ-এর ওপর
গোলা পায়রা —পালক —ডিম
সারা দুপুর সবার ঘুমের সুযোগে
বাথরুমের দরজা বন্ধ করে
পায়রা ধরা
একদিন লুকিয়ে খেলে নেভিকাট
মুখে কীরকম গরম লাগছিল
মনে হচ্ছিল পুড়ে যাবে
তবুও ছাড়োনি —-
ধোঁয়ার সঙ্গে প্রথম মোলাকাৎ
নিষিদ্ধ স্বাদ

সাধুপুরির ভগ্নস্তুপ
যে ভাঙা বাড়ির ওপর আগাছা
নাকি আগাছার ওপরেই বাড়িটা
বোঝা যেত না
কেন যে ওটার নাম সাধুপুরি
ভুলে গেছ ?
কিন্তু মনে আছে
টকটকে লাল একটা ফড়িং-এর পেছন পেছন
তাড়া করেছিলে চাটুজ্জেদের শিবমন্দির থেকে
ধাওয়া করতে করতে
পৌঁছে গেছিলে সেই হানা বাড়িটাতে
কী অসম্ভব সুন্দরী সেই ফড়িংটার
পিছু নিতে নিতে
ঢুকে পড়েছিলে সেই পোড়ো বাড়িতে
মাকড়সার জাল—অন্ধকার
অন্ধকারের মধ্যে হারিয়ে গেছিল ফড়িংটা
বা আটকে গেছিল —- মাকড়সার জালে
হঠাৎ গা ছমছম
একা মনে হয়েছিল তোমার
আমি কিন্তু ছিলাম
তোমার পা পড়ে গেছিল কাঁচা বিষ্ঠায়
অবাক হয়েছিলে —- তালপুকুরের পাথরটার ওপর
কচলে কচলে পা ধুতে ধুতে
ভেবেছিলে কে এত নিশ্চিন্তে পায়খানা
করে এরকম ভুতুরে বাড়িতে

মেজমামুর বাড়ির গন্ধরাজ গাছটা
তার পাশেই বেঁটে জবা গাছটা
তার পাশেই চিনিচম্পা
আর তার পাশে সেই জোড়া পেয়ারা গাছটা
যা তোমার শয্যার মতোই নিরিবিলি ছিল

মগডালে বসে হেলান দিয়ে
কাঁচা পেয়ারার গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে
চোখ চলে যেত ইলেকট্রিক পোল
বাঁকা খেজুর গাছটাকে পেরিয়ে

ধানক্ষেত আর ধানক্ষেত
আর ছবির মতো একটা হলদেটে বাড়ি
কাউকে কোনোদিন জিজ্ঞাসা করনি
ওটা কী ?
একের পর এক লোক পেরিয়ে যেত
সাইকেলে, হেঁটে, ছাতা মাথায়

ততক্ষণে আইসক্রিমওলা হর্ন বাজাতে শুরু করত
লাল, সবুজ, হলদে, সাদা অমৃত
দশপয়সায় দুটো

কয়েক মুহূর্তের জন্য তুমি একবার হারিয়ে গেছিলে
ঘুরে দাঁড়িয়ে খুঁজে পাওনি কাউকে
বেলুনওলা, ওমলেটভাজা, নাগরদোলা
ছ্যাৎ করে উঠেছিল তোমার বুকের ভেতর
কান্না পায়নি ?
তখন তুমি একটা পাড়াও চেনো না
পৃথিবী তো দূরের কথা |
আজকে যখন বয়স্ক চোখে
গঙ্গার জলে ভাসতে থাকা
বয়ার গায়ে শ্যাওলা দেখো
কিংবা তীরের দিকে অদ্ভুত নোঙরা কিছু
যার নিজস্ব চরিত্র হারিয়ে
এখন নোঙরা—- অজানা হয়ে গেছে
তারই পাশে শিকড়গাড়া
ক্যাপস্টানটা দেখো জং পড়েছে কি না

কিম্বা বাইপাসের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা
কালো কাচের সুমোর ভেতর
ঘনিষ্ঠতা প্রত্যক্ষ করো
মনে রেখো

আমিই তোমাকে পৃথিবীর সঙ্গে আলাপ
করিয়ে দিয়েছিলাম।

 

 

ইতিহাস ওভাবে হয় না
ইতিহাস এমনি এমনি হয়

আমার শিরদাঁড়াতে খেজুর গাছের মিল খুঁজে পেতেই
আমার দিকে সে বার বার তাকিয়েছিল |

খেজুর গাছের সঙ্গে সুপুরি গাছের মিল কিন্তু
আমার চোখে পড়ে গেছেবহুকাল আগে—
দু-তিনশো বছর আগে আমি…
তোমাকে বলেছিলাম সে কথা—
তোমার মনে নেই
ভুলে যাওয়াটা স্বাভাবিক ভুলেও গেছ
কিন্তু যা কিছুই আমরা ভুলে গেছি
তা কিছুই তো ভুল নয় |

অত আগের কথা মনে না থাকলেও
না থাকতে পারে—
কিন্তু মাত্র এক যুগ আগে
আমি তাকে সুপুরি বলেছিলাম
আর তার শিরদাঁড়াটা সোজা হয়ে গেছিল
আর তার ভুরু দুটো নৌকা হয়ে গেছিল
আর—
আর তখন তাহার ঘাড়ে বিন্দু বিন্দু ঝরে ঘাম—
সে দিকে তাকিয়ে গৃহের ভিতরে সিন্ধু দেখার
অপেক্ষায়—লক্ষ চাষার মতো মৃত্যু হতে পারত আমারও
তা হল না—
কপালের ওপর ফুরফুর করে উঠল কয়েকটা চুল
পিঠের ওপর নোনা ধরা দেওয়াল
জামার হাতায় চুনের দাগ ঝাড়তে ঝাড়তে
সেও বুঝতে পেরেছিল
ইতিহাস ওভাবে হয় না এমনি এমনি হয়
তারপর
তারপর ট্রা লা লা লা লা
তারপর ব্রা লা লা লা লা
তারপর ট্রি লি লি লি লি
তারপর খুলি লি লি লি লি
তারপর চু চু মু চু চু ম
তারপর বছর পাঁচেক ঘুম— আর সেই ঘুম ভেঙে
উঠতে না উঠতেই
চোখের সামনে ভেসে উঠল একটা পান্থপাদপ গাছ
একটা শিরদাঁড়া
হাতের মুঠোয় সাতশো আঠাশটা সুপুরি নিয়ে
ঘুম থেকে উঠলাম
তারপর দুজনেই শুয়ে আছি—
একই বিছানায়
একই কপাল নিয়ে
একই ঘরে— এক ঘর ভর্তি বাতাস
আর পাশের বাড়ির A C মেশিন-এর শব্দ
কোথাও জল পড়ছে
আমাদের কোনো পাশের বালিশ নেই
পাশের বাড়ি আছে
আর আছে ছ-সাতশো বছরের কিছু স্মৃতি
যা দুহাত উজাড়করে একে অপরকে
দেওয়ার চেষ্টা করেও আমাদের হাত শুকনো হয়নি
তার কিছু কিছু মনে পড়ে না তোমার
কিছু কিছু আমিও গেছি ভুলে
তুমি শুলে আমি জাগি
আমি শুলে তুমি
তোমার জামার হাতার ওপর চুনের দাগ
চাপড় মেরে তুলতে তুলতে আমি হাসতে থাকি
তুমিও হাসতে হাসতে টলে পড়ো
আমার কাঁধে—
তোমার চোখে কাজল নেই
দূরের একটা সবজে কালো নদীর ওপর
একটা মাত্র নৌকা টলটল করছে
তখন খাতার পাতায় বিন্দু বিন্দু ঝরে ঘাম
তখন মনে পড়ে যায় দেড়শো বছর আগের
একটা ভোরবেলার কথা
চারিদিকে ছিঁড়ে যাওয়া গাঁদা ফুলের পাপড়ির তীব্র গন্ধ
একটা ক্ষুর কেউ ধরে রেখেছে কারও চোখের ওপর
একটা নর্দমা— আপন মনে বয়ে যাচ্ছে
গঙ্গারঙা জল নিয়ে
আর আমি একা একটা আস্ত সুপুরি গাছের ছায়ার
নীচে দাঁড়িয়ে দারুণ নাচছি দুরন্ত নাচছি
প্রায় তাণ্ডব-এর মতো
উল্টে পড়ে যাব যাব — এমত অবস্থায়
দেখতে পেলাম পোস্টার লেখা হচ্ছে
আলতা দিয়ে সাদা কাগজে
মুন্ডু চাই— মুন্ডু চাই
আর তুমিই বোধহয় আমাকে বললে
অস্ফুটে—ইতিহাস এভাবে লেখা হয় না
এমনি এমনি হয় |

 

 

 

এবার যখন কালবৈশাখী হবে তোদের বাড়ি যাব |
লাগোয়া বাগানের কালো পুরোনো পাঁচিল
তার ওপর বসতে পারে একটা দুটো কাক
ঘাসের ওপর লাল পিঁপড়েগুলোকে লক্ষ রেখে
বসে পড়ব |
ততক্ষণে আম গাছের প্রত্যেকটা পাতা
ধুলোর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে
লুটিয়ে পড়েছে ভিজে বাতাসের বুকে |
উতালপাতাল আদরে
বাতাসকেও করে ফেলেছে কচি সবুজ |
বাতাসের গায়ে তখন সবুজ সবুজ গন্ধ,
আমগাছের স্যাঁতসেঁতে কোমরে
পিঠ বিছিয়েই তোকে একটা দেশলাই চাইব |
তুই ছুটবি না— হাসবি একগোছা ফুলের মতো,
তারপর ঘাস পেরিয়ে ঘাস পেরিয়ে
রান্নাঘর |
আমপাতাতে ধুলো নেই
গড়গড়ের সুবলডোমের চোখের কোলে কালি নেই
ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়েছে বৃষ্টি |
হাইস্কুলের সামনের সরানে কাদা হয়েছে
তেঁতুলবোনার জল উপচে পড়ে
বলাই মামাদের বাড়ির সামনে ছোট্ট একটা ডোবা |
তার ওপর পাটকাঠির বাঁধ দিয়ে
কুঁচো মাছ ধরছে আবান,
ওর পায়ে কাদা ওর হাঁটু ছড়ে যাচ্ছে
ডাবু দিদিমা কি বেঁচে আছে ?
না থাকলে অন্য কেউ ধুনো জ্বেলেছে |
‘আবান আর জল ঘাঁটিস না— বাড়ি আয়—’
তুই চলে এসেছিস, হাতে একটা মোম-দেশলাই |
তোদের বাগানের প্রত্যেকটা পাখিকে তুই চিনিস ?
তাদের আদর করে নাম দিয়েছিস ?
দিসনি ?
তা হলে আমাকে ডায়েরি দিয়েছিস কেন ?
ওই বেগুনি রঙা ফুলের ওপর
হলদে প্রজাপতির কম্বিনেশনে
একটা সালোয়ার বানাসনি কেন ?
সিগারেট ধরাব— একরাশ ধোঁয়া
মিশে যাবে ডাবু-দিদার দেওয়া ধুনোর ধোঁয়ার সাথে |
যদি না মেশে
মেশাতে পারবি না—
তারও সাথে মেশাতে পারবি না ?
দয়াময় কাকুদের মন্দিরের আরতির ঝনাত্ঝম
পৃথিবীর সমস্ত ইলেকট্রিক তার কেটে
পোল ফেলে দিয়ে
জ্বালাতে পারবি না একটা লন্ঠন ?
একদম নিটোল করে কাটতে পারবি না পলতেটা ?
একটুও কালি পড়বে না
একটুও ধুলো না
পাতারা সবুজ — সুবল ডোমের চোখের তলায় কালি নেই
সুডৌল আলো ছড়িয়ে পড়বে
মন্দিরের চাতালে নিজের ইচ্ছেমতো
সমস্ত অন্ধকার না তাড়িয়ে—
পারবি — নাকু, কার্তিক, চন্দ্রশেখর, দীনু সবাইকে ডাকতে ?
আমরা নারকেল কাড়াকাড়ি খেলব |
ওদেরকে না পারিস—
নাম না জানা আরও কয়েকজনকে জোগাড় কর,
আবান ওদের সাথে খেলবে |
হুইসল্ বাজিয়ে ডাক
যেমন করে গৌতম বিকেলবেলা ডাকত সবাইকে
ফুটবল খেলার জন্য,
আর আমরা ওর বাঁশি শুনে ছিটকে বেরোতাম—
আলের ওপর দিয়ে ছ-নম্বর বলটা
হাত বদল করতে করতে |
ডাক—
আবান রোজ হার্বাট হাউস ছুটি হলে
আমার হাতে ওয়াটার বট্ ল, ব্যাগ আর আইকার্ড
দিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করে
তুমি এসেছো কেন ?
ওর মামমাম-এর মাথায় আমি ব্যুটিক ঢুকিয়ে দিয়েছি
নন্দতাঁতি ঢুকে গেছে—- চাইনিজ প্রিন্ট ঢুকে গেছে
ব্রাশ পেন্ট ফেব্রিক অ্যাপ্লিক
ওর মামমাম জোলাম খায় |
আবানও আধো আধো করে জোলাম চাওয়া শিখে গেছে
আমরা ওকে প্যাপ করে দিই,
ঘাড়ে থাবড়া মেরে ঘুম পাড়িয়ে দিই |
ওর মাথায় আমরা ব্যুটিক ঢোকাইনি
কিন্তু স্কুল ছুটির পর ও
আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়
লাগোয়া একটা সিঁড়ি দিয়ে— রোজ
রোজ ওর ওপর উঠে আমাকে বলে
ওর মামমামকে বলতে
ব্যুটিক থেকে চলে আসতে |
বাচ্চা নিতে আসা একটাও মাকে সুন্দরী মনে হয় না

আবানকে আমি কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া চিনিয়ে দিয়েছি
তাও ফুটেছে বলে
ওকে মন্দিরের চাতাল চেনাতে পারিনি
ওকে চিলছাদের ওপর ওঠাতে পারিনি |
ওখান থেকে বড়োপুকুরের তালগাছগুলো গোনাতে পারিনি !
ও আমাকে হাত ধরে টেনে উঠিয়ে দিয়েছে
ওর স্কুলের ওপরে কাঠগড়ায় |
আমাকে নামাতে পারবি ?
পারবি না ?
তাহলে ডায়েরি দিয়েছিলি কেন ?
আমি যাব— তোদের বাড়ির পাশের বাগানে
কালবৈশাখী এলেই যাব |
ঠপ ঠাপ ঠুপ ঠাপ করে কচি কচি আমগুলো খসে পড়বে
তুলে তুলে এনে একজায়গায় জড়ো করব
কাঁচা গন্ধে ভিজে যাবে হাতের তালু
আমের বোঁটার কষে হাত চটচটে
ঝাল-নুনের কৌটোটা ফুটো করে রাখবি |
মা জর্দা খায় ?
না স্যাসের মধ্যে ঝাল-নুন চাই না
জর্দার কৌটো চাই—বেগুনি রঙের
পলিপ্যাকের পর পলিপ্যাক উড়ছে আকাশে
সব কটা ঢিল নোঙর করে নামিয়ে ফেলবি
পারবি না ?
না পারলে আবান আবার আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবে
আমার কোনো কথা শুনবে না |
বলবে — মামমামকে আসতে বলো
মামমামকে চলে আসতে বলো
কেন মামমাম ব্যুটিক যাবে ?
আমি পারব না |
তুই পলিপ্যাকগুলো নামিয়ে ফ্যাল
পাখিদের নাম দে
প্রজাপতিদের রং নে
তুই আমাকে ডায়েরি দিয়েছিস
তোর বাড়ির পাশে বাগান আছে
আমি যাব — কালবৈশাখী এলেই যাব |
তোর কাছে দেশলাই চাইব
জর্দার কৌটো চাইব
আমি পেলেই সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে #2472;িয়ে দেব আবানকে |
ওর চোখের সামনে থেকে সরিয়ে দেব পলিপ্যাক
তুই বাগানটা দে
আর যেভাবেই হোক খুঁজে বের কর, ডেকে আন
নাকু-কার্তিক-দীনু-চন্দ্রশেখরদের |
আমি আর আবানের স্কুলের ওপর উঠে
ডাকতে পারছি না ওর মামমামকে
খুঁজে বের করতে পারছি না— পারছি না
অথচ আমিই ওর মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছি ভাবনা—

ঢুকে যাওয়া কত সহজ
কিন্তু বেরোতে গেলেই একটা কালবৈশাখী লাগে |

 

 

 

ওগো ঝুমুর গায়েন তোমার দিন কাটে না
তোমার রাত কাটে না
তবু ঢোল কাটে নেংটি ইদুঁরে
ভুখা পেটে তুই মাদল বাজা ( ৩ )
ও লাল পলাশের বনে বনে
মাতল রে প্রাণ কী আগুনে
মন জ্বলে সে আগুনে আখা জ্বলে না
ওগো ঝুমুর গায়েন তোমার দিন কাটে না
তোমার রাত কাটে না
তবু ঢোল কাটে নেংটি ইদুঁরে

গানে পাবে প্রাণের আরাম লাগে মনে ধন্দ
তোমারও সুরে গায়েন খালি পেটের গন্ধ গায়েন
খালি পেটের গন্ধ

ও শুকনো ক্ষেতের আলে আলে
কাঁধে মাদল মাতাল তালে
নেচেই ভরে মন গায়েন পেট ভরে না

ওগো ঝুমুর গায়েন তোমার দিন কাটে না
তোমার রাত কাটে না |
তবু ঢোল কাটে নেংটি ইদুঁরে |

 

 

 

কিছু নেই পুরো ফাঁকা
শুধু দুটো ডিম ছিল গোটা ফ্রিজে
ওকেই যদি দুটো দিয়ে দিই
কী খাব আমি নিজে

রাত্রি মধ্য গদ্য পদ্য কাব্য নিশুতি তারা
সব ঢুকে গেছে ডিমের মধ্যে
ভাবি কী লক্ষ্মীছাড়া

নিরীহ দু’ চেতন অচেতনে

অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে দুটো ডিম কটা হাত ?
বাইরে এখন শিশিরের সাথে সঙ্গমে রাজি রাত
হঠাৎ চাঁদের মুখ মনে পড়ে, মনে পড়ে ভাবিনি তো
ডিম তাতে এই
ভেবে দেখ যদি দু-দুখানা চাঁদ হত

 

 

ঢুলু ঢুলু চোখ শালা দেখি কত লোক দিয়ে
তাকিয়াতে ঠেস বলে আহা বেশ বেশ বেশ
বেশ বেশ বলে আর শুধু যায় ঢুলে ঢুলে
চোখ হল লাল লাল লাল সে সকাল আর
কবে লাল হবে আর কবে লাল হবে আর
কবে লাল হবে

তোদের ঘুম পেয়েছে বাড়ি যা
স্বপ্ন দেখ ঘুমের ফাঁকে

যাবি যাবি করলি তবু কেন গেলি না রে বাড়ি
চলে যা চলে যা চেপে বুলেট PROOF গাড়ি
তোর ধা চকচকে জুতোর পালিশ
চোখ করে বড্ড নালিশ
চুনোট করা ধুতির কোঁচা
বুকে মারে বড্ড খোঁচা

ঘুম পেয়েছে বাড়ি যা স্বপ্ন দেখ ঘুমের ফাঁকে ||

 

 

কী হবে নিখোঁজ শান্তিতে খুঁজে তার চেয়ে নিজেই যাই হারিয়ে
অলি গলি ঘর গেরস্থালি ফেলে সব সীমা ছাড়িয়ে
এ Concrete জঙ্গলে শিকার না হয়ে চলো যাই জঙ্গলে
চলো চলে যাই সেখানে যেখানে নিভৃতে সব নিঝুম
সবুজে সবুজে শালের দঙ্গলে ফুল ফোটার যেথা ধুম
চলো মামা পালিয়ে ( ৩ )
ও মামা রে ( ২ )

কে জিতবে ভোটে বাজেটে কী জোটে
শহরে এ ভীড়ে হিরে থেকে জিরে
না ভেবে
ও মামা রে ( ২ )

কী আফশোস কী আক্ষেপ
দিনরাত কী ফোঁসফোঁস
এটা হল না ওটা পেল না
কেউ সময়ে পটল তোলে না
কেউ ভালোবাসাতেও গলে না
কেউ ঠিক সেরকম কালো না
কেউ ঠিক সেরকম লালও না
কেউ সুবিধে বুঝে গোলাপী
কেউ সারাদিন কিছু খেলো না
কেউ রবিবার ভেবে জিলিপি
খায় খায় আর শুধু দাঁত দেখায়
এ ভালো লাগে না
( সত্যি ভালো লাগে না )
চলো মামা পালিয়ে ( ২ )
ও মামা রে ( ২ )

বিগ্রেডে বিক্ষোভে বি-গ্রেড নেতার ঘ্যানঘ্যান বুকনি
ডালহৌসিতে পচা ছানার সন্দেশ হাফ বয়েলড্ ঘুগ্ নি
ভিক্ টোরিয়াতে খাকি পোশাকে ছেলেধরাদের রাজ
প্রতি মাসে একবার একই contractor –এর একই রাস্তা সারাই কাজ
সস্তা shuttle-এ রোজ রোজ এই মধ্যবিত্ত ভীড়ে
কে যাবে আগে আগে কে যাবে নিজের বাড়ি ফিরে
ও মামা রে ( ২ )
কে জিতবে ভোটে বাজেটে কী জোটে
শহুরে এ ভীড়ে হিরে থেকে জিরে
না ভেবে
ও মামা রে ( ২ )
যায় ছুটে যায় এ পরান চায় লাল মাটির সরানে
সাঁঝের বেলায় শাঁখ বাজে
প্রদীপ জ্বালায় ধানের গোলায়
ঘোমটা পরা গেঁয়ো বউ
সাঁওতালি পাড়ায় চল মন মেশাই
মহুয়ার নেশায় মাদলের তালে মাতাল
চলো নাচি ভাদু ছৌ

না-হয় একদিন ভাঙলই ঘুম অচিন পাখির ডাকে
না-হয় একদিন ১০টা ৬টার কাজ রইল তোলা তাকে
না-হয় একদিন নিয়ম না দেখে জোনাক জ্বালা রাতে
খানিকটা সময় কাটিয়ে দিলাম একা চাঁদের সাথে
ও মামা রে ( ২ )
চলো মামা পালিয়ে ( ২ )

কেউ বদলায় না কেউ বদলায়
কেউ অতলের পথ বাতলায়
কেউ বিউলির ডাল সাতলায়
কারও লালা ঝরা জিভ হ্যাংলা
কারও কলেবর বুড়ো আংলা
কেউ জল ছাড়া খায় বাংলা
ও মামারে ( ২ )
চলো মামা পালিয়ে ( ২ )

 

 

 

কী হবে নিখোঁজ শান্তিতে খুঁজে তার চেয়ে নিজেই যাই হারিয়ে
অলি গলি ঘর গেরস্থালি ফেলে সব সীমা ছাড়িয়ে
এ Concrete জঙ্গলে শিকার না হয়ে চলো যাই জঙ্গলে
চলো চলে যাই সেখানে যেখানে নিভৃতে সব নিঝুম
সবুজে সবুজে শালের দঙ্গলে ফুল ফোটার যেথা ধুম
চলো মামা পালিয়ে ( ৩ )
ও মামা রে ( ২ )

কে জিতবে ভোটে বাজেটে কী জোটে
শহরে এ ভীড়ে হিরে থেকে জিরে
না ভেবে
ও মামা রে ( ২ )

কী আফশোস কী আক্ষেপ
দিনরাত কী ফোঁসফোঁস
এটা হল না ওটা পেল না
কেউ সময়ে পটল তোলে না
কেউ ভালোবাসাতেও গলে না
কেউ ঠিক সেরকম কালো না
কেউ ঠিক সেরকম লালও না
কেউ সুবিধে বুঝে গোলাপী
কেউ সারাদিন কিছু খেলো না
কেউ রবিবার ভেবে জিলিপি
খায় খায় আর শুধু দাঁত দেখায়
এ ভালো লাগে না
( সত্যি ভালো লাগে না )
চলো মামা পালিয়ে ( ২ )
ও মামা রে ( ২ )

বিগ্রেডে বিক্ষোভে বি-গ্রেড নেতার ঘ্যানঘ্যান বুকনি
ডালহৌসিতে পচা ছানার সন্দেশ হাফ বয়েলড্ ঘুগ্ নি
ভিক্ টোরিয়াতে খাকি পোশাকে ছেলেধরাদের রাজ
প্রতি মাসে একবার একই contractor –এর একই রাস্তা সারাই কাজ
সস্তা shuttle-এ রোজ রোজ এই মধ্যবিত্ত ভীড়ে
কে যাবে আগে আগে কে যাবে নিজের বাড়ি ফিরে
ও মামা রে ( ২ )
কে জিতবে ভোটে বাজেটে কী জোটে
শহুরে এ ভীড়ে হিরে থেকে জিরে
না ভেবে
ও মামা রে ( ২ )
যায় ছুটে যায় এ পরান চায় লাল মাটির সরানে
সাঁঝের বেলায় শাঁখ বাজে
প্রদীপ জ্বালায় ধানের গোলায়
ঘোমটা পরা গেঁয়ো বউ
সাঁওতালি পাড়ায় চল মন মেশাই
মহুয়ার নেশায় মাদলের তালে মাতাল
চলো নাচি ভাদু ছৌ

না-হয় একদিন ভাঙলই ঘুম অচিন পাখির ডাকে
না-হয় একদিন ১০টা ৬টার কাজ রইল তোলা তাকে
না-হয় একদিন নিয়ম না দেখে জোনাক জ্বালা রাতে
খানিকটা সময় কাটিয়ে দিলাম একা চাঁদের সাথে
ও মামা রে ( ২ )
চলো মামা পালিয়ে ( ২ )

কেউ বদলায় না কেউ বদলায়
কেউ অতলের পথ বাতলায়
কেউ বিউলির ডাল সাতলায়
কারও লালা ঝরা জিভ হ্যাংলা
কারও কলেবর বুড়ো আংলা
কেউ জল ছাড়া খায় বাংলা
ও মামারে ( ২ )
চলো মামা পালিয়ে ( ২ )

 

 

জানি না এ পথ কবে হল ঠিক শুরু
জানি না এ পথ কবে হবে ঠিক শেষ
জানি না কবে যে ফুরোবে বেচাকেনা
জানি না কবে যে ফুরোবে স্বপ্নরেশ

জানি আমি জানি শুধু জানি আমি জানি
তুমি ছিলে তাই সবই ছিল
এলোমেলো তবুও তো কেটে গেল দিনগুলো

জানি আমি জানি শুধু জানি আমি জানি
তুমি ছিলে তাই সবই ছিল
এলোমেলো তবুও তো কেটে গেল দিনগুলো
এ জীবন পথ চলা কাঁধ ছুঁয়ে ছুঁয়ে
পেরিয়েছি কত কিছু অসময় সময় ফেলে
পথ চলা তবু হয় না তো পুরোনো |

জানি না সীমানা পেরোতে পারবে কি না
আর সীমানা পেরিয়ে যাবেই বা কোথায়
দাঁড়িয়ে রয়েছি মৃত্যুর মুখোমুখি
আজ বা কাল নিতেই হবে বিদায় |

জানি আমি জানি শুধু জানি আমি জানি
তুমি ছিলে তাই আজও আছি
বেপরোয়া এ জীবনে খেলেছি যে কানামাছি

এ জীবন পথ চলা কাঁধ ছুঁয়ে ছুঁয়ে
পেরিয়েছি কত কিছু অসময় সময় ফেলে
পথ চলা তবু হয়নি তো পুরোনো |

 

 

 

সুগন্ধি ধূপ —-চুপ
চুপ কেন ?
রেগে যাবে
মও কা পেলে
শাপ দেবে
বয়ে গেল
গা তবে—
সুগন্ধি ধূপ দিল চাল দিল কলা দিল
প্রসাদের থালা দিল চেটে পুটে খেলে গুরু কিছু পেলো না
তুমি যা জিনিস গুরু আমি জানি
আর কেউ জানে না |
ছুপে ছুপে কত রূপে তুমি এসে ধরা দাও
সে রূপের বাহার আমি জানি কেউ জানে না
তুমি যা জিনিস গুরু আমি জানি
আর কেউ জানে না |

এ শালারা চেল্লাবে কিছু পাবে না
কিছু পাবে না, কিছু পাবে না
চিল্লিয়ে গলা ফেটে যাবে তবু পাবে না
তুমি যা জিনিস গুরু—

দলবল নিয়ে এসে কিছু হবে না
কিছু হবে না, কিছু হবে না
কত মালই এল গেল
বাঁয়া খাতা চলে গেল
তোমার অতল তলে কূল পেল না
তুমি যা জিনিস গুরু আমি জানি আর কেউ জানে না
তুমি যা জিনিস গুরু সত্যি বলছি আমিও চিনি না |