কিশোর কুমার
ওরে হো . . . . . .
নাম আমার কিশোরকুমার গাঙ্গুলী,
রবি ঠাকুর যে ভাষাতে বলতো কথা, তাই বলি
নাম আমার কিশোরকুমার গাঙ্গুলী॥
ব্যানার্জী নয়, মুখার্জী নয় — গাঙ্গুলী
নাম আমার কিশোরকুমার গাঙ্গুলী॥
আহা গল্প হলেও সত্যি কথা, বলছি সবাই শোনো
রূপকাহিনী, রূপকথা নয় আজগুবি নয় কোনো
আমার গানের বন্ধুরা সব, মন দিয়ে আজ শোনো!
এক যে ছিল দুষ্টু ছেলে, বেজায় রকম কালো
কেবল লেখাপড়ায় অষ্টরম্ভা মনটা ছিল ভালো
ও তার মনটা ছিল ভালো
এমনিতে, সে চালাক-চতুর মোটেই সে নয় বোকা
আদর করে ডাকতো সবাই, গাইয়ে বাবু, খোকা।
খাণ্ডোয়া বাসী, বম্বে বাজার
সেই ছেলেটার বাড়ী
তাড়ির দোকান, গাঁজা-গুদাম
সামনে ছিল তারই
পালিয়ে যেত খেলার মাঠে
সেথায় সারা বেলা
বন্ধুরা সব জুটতো এসে
খেলতো নানা খেলা
(সংলাপ)
—- কয়েন তো সেই পোলাডা কেডা ?
ওটা আমি গো আমি
ব্যানার্জী নয়, মুখার্জী নয়, চ্যাটার্জী নয় — গ্যাঙার্জী
নাম আমার কিশোরকুমার গাঙ্গুলী॥
আমি বম্বেবাসী
আজ, প্রবাসী
তবু খাঁটি বাঙ্গালী
নাম আমার কিশোরকুমার গাঙ্গুলী
আমার বাবা ছিলে রাশভারী লোক
বি.এ. বি.এল. কুঞ্জলাল
উঠ্ লে ক্ষেপে যেতেন রেগে
মুখটা যে তার হত লাল
বাবা ছিলেন পেশায় উকিল
নেশায় যে তাঁর ছিল গান
বন্ধুরা সব আসতো, যেতো
বাবার ছিল দরাজ প্রাণ॥
(সংলাপ)
বাবার খুব শখ ছিল। উকিল বন্ধুদের বাড়িতে ডেকে এনে আসর বসাতেন। আর, সেই আসরে,
ঘুম থেকে টেনে তুলে আমাকে বলতেন — খোকা, ওরে খোকা, শুনিয়ে দে সকলকে অশোক আর
দেবিকা রাণীর সেই গানটা তাড়াতাড়ি। আর আমি সেই আসরে গান গেয়ে পেয়েছি কত সম্মান,
কত ক্যশ কত কড়ি। তখন আমি কি গান গাইতাম জানেন ?
“ম্যায় বন্ কি চিড়িয়া বনকে বন্ বন্ বঁলু রে
ম্যায় বন্ কা পন্ছি বন কে তন্ তন্ তলু রে . .. .”
“দিয়া জ্বালাও জগমগ জগমগ দিয়া জ্বালাও . . . ”
“নিশীথে যাইও ফুলবনে, ভ্রমরা
নিশীথে যাইও ফুলবনে . . .”
“হৈ লা-লা ঢিং লা-লা হৈ . . .”
দাদামণির গান শুনিয়ে পেতাম একটি টাকা
শচিন কর্তার ভাটিয়ালী গেয়ে পেতাম আড়াই টাকা
চুক্তি ছিল সায়গল সাহেবের গানে পাঁচট্ টাকা॥
সবার যিনি অশোর কুমাক —আমার দাদামণি
তাঁর কাছেতেই হাতেখড়ি —আমার পরশমণি
আমার দিদিমণির গানের গলা —মিষ্টি ছিল ভারি
দিদি আমার গানের গুরু —শিষ্য আমি তারই
এমনি করে রঙে-রসে —ভরে ছিল দিনগুলি
ছোটবেলার কিশোর এখন কিশোরকুমার — হারিয়েছে গাঙ্গুলী
(সংলাপ)
— বুঝলেন না ?
— বোঝাচ্ছি। আমি গায়ক হলাম, খুব নাম হল। আমি অভিনেতা হলাম — আরো নাম হল।
হঠাৎ ; হঠাৎ আমার জীবনে উঠল ঝড়। ঝড় না, ঝড় না-কর-আয়কর। আয়কর আমাকে করল
দেশান্তর।
সংসারে সভ সেজে থাকা লাগল না পছন্দ
অবশেষে হয়ে গেলাম স্বামী কিশোরানন্দ
জয় গোবিনদম্ জয় গোপালম্
জয় গোবিনদম্ জয় গোপালম্
পিছে পড় গয়া ইকাম্ ট্যাক্সম্
পিছে পড় গয়া ইকাম্ ট্যাক্সম্ ॥
(সংলাপ)
তারপর অনেক কিছুই ঘটল। কিছু দিলাম, কিছু পেলাম, কিছু হারালাম।
স্মৃতি নামের রেলগাড়িটা পেছন দিকে ছোটে
আমার মনের পর্দাতে সব ছবি হয়ে ওঠে
বেশ তো ছিলাম ছোটবেলায় মায়ের আঁচল তলে
সেই কথাটি ভেবে এখন ভাসি চোখের জলে॥
শিশু ঘুমালে পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে
গানের সুরে ঘুম পাড়াতো মা যে ভালবেসে
ঘুম পাড়ানি ছড়ায় শিশু এখন ঘুমোয় না
তারার দেশে হারিয়ে গেছে — স্নেহময়ী মা॥
হাওয়া,
মেঘ সরায়ে, ফুল ঝরায়ে
ঝিরি ঝিরি এলে বহিয়া
খুশীতে ভরেছে লগন
আজ ওঠে মন ভরিয়া ||
এতদিন কোথায় ছিলে
পথ ভুলে তুমি কি এলে
প্রেমের কবিতা তুমি
শোনালে য়ে গান গাহিয়া
কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া
“ভালোবাসো” যাও বলিয়া ||
তুমি এলে তাই ফোটে ফুল
তুমি এলে তাই ভাঙে ভুল
মন আজ কিছু মানে না
হৃদয় সাগর আকুল |
তুমি এলে প্রিয়ার বেশে
ভরে দিলে মন আবেশে
দক্ষিণা বাতাস তুমি
জুড়ালে দহন হিয়া
সুরে সুরে বেজে ওঠে বাঁশুরিয়া
শুনে, সবে যাই ভুলিয়া ||
যা দেখি নতুন লাগে
তুমি আমি একই আছি
দু'জনে যা ছিলাম আগে।।
সময় চিরদিন শুধুই বয়ে যায়
থেমে সে তো থাকে না
কত ঝড় মেঘ আসে চলে যায়
আকাশ মনে রাখে না
শুধু প্রথম জীবনের ভালোবাসা
স্বপ্নেরই মতো জাগে।।
পড়ে কি মনে তুমি আমি
এই পথ ধরে যেতাম
ভালোই হতো সেই দিনগুলো
ফিরে যদি পেতাম
সেই তোমাকে পাবো নাকি
আজ প্রাণের অনুরাগে।।
মনের খাতায় লিখে রাখো
আমায় পড়বে মনে
কাছে দূরে যেখানেই থাকো।।
হাওয়ার গল্প আর
পাখীদের গান শুনে শুনে
আজ এই ফাল্গুনে
দুটি চোখে স্বপ্ন শুধু আঁকো।।
এসো আজ সারাদিন
বসে নয় থাকি পাশাপাশি
আজ শুধু ভালোবাসা বাসি
শুধু গান আর হাসাহাসি।।
রঙের বরষা ঐ
নেমেছে যে দেখো ফুলে ফুলে
দুটি হাত তুলে
আমাকে আরো কাছে ডাকো।।
ভালোবাসা হয়ে গেছে
তুমি যেন ভুল বুঝোনা
মালা গেঁথে রেখেছি
পরাবো তোমায়
তুমি যেন ছিঁড়ে ফেলোনা।।
যে কথা যায়না বলা
শুধু বোঝা যায়
মনের গভীরে
শুধু আলো হয়ে যায়
সে রঙিন আলোর দীপ কোনদিনও
নিভে যাবেনা।।
জানিনা কেমন করে কি দেবো তোমায়
মন ছাড়া আর কিছু নেইতো আমার
সুখের শ্রাবণ যদি মেঘ নিয়ে আসে
ভিজে যাবো অঙ্গনে তোমার বরষায় বসে
বিজলীর আগুনেতে লেখা নাম
কোনদিনও মুছে যাবেনা।।
কবে হলো...জানি না।
শুরু হলো...শেষ হলো
কি যে হলো...জানি না তো।।
কেউ বোঝে কি না বোঝে হায়
আমি শুধু বুঝি।
এই আঁধারে ভুল করে হায়
আলো মিছে খুঁজি।
মেঘ মরুতে চায় কি দেখা
দিন যায় একা একা...একা।।
কেউ ভাবে কি না ভাবে হায়
আমি শুধু ভাবি।
যে প্রেম দিতে জানে
তার নিয়ে কোনো দাবী।
মনে পরে কেন তারে
মনে পরে বারে বারে (তারে)।।
তুমি তা বুঝে নাও
আমি চিরদিন তোমারই তো থাকবো
তুমি আমার আমি তোমার
এ মনে কি আছে
পারো যদি খুঁজে নাও
আমি তোমাকেই বুকে ধরে রাখবো
তুমি আমার আমি তোমার
আমি যে কে তোমার
তুমি তা বুঝে নাও।।
কেন আর সরে আছো দূরে
কাছে এসে হাত দু'টো ধরো
শপথের মন কাড়া সুরে
আমায় তোমারই তুমি করো
ও…তোমারই স্বপ্ন দু'চোখেই আমি আঁকবো।।
ওপাড়ের ডাক যদি আসে
শেষ খেয়া হয় পাড়ি দিতে
মরণ তোমায় কোনদিনও
পারবে না কভু কেড়ে নিতে
ও…সুখে দুঃখে আমি তোমাকেই কাছে ডাকবো।।
যা চেয়েছি কেন তা পাই না।
ছেড়া ছেড়া ফুলে গাঁথা মালা
ভুলে পুরোনোকে কেন ভুলে যাই না।।
পথের বাঁকে এসে মনে হলো
অতীতটা হয়ে যাক দূর।
চলব এগিয়ে তবু
বুকের বাঁশীটাতে
বাঁধব নতুন এক সুর।
ভালোবাসা যায়
আলো আশা পায়
সেই গান কেন গাই না।।
আজকে যা ভালো লাগে হয়ত আবার
বদলে যেতেও পারে কাল।
ঝড়িয়ে মরা পাটা
ফোটাবে নতুন কুঁড়ি
শুকনো গাছের কোনো ডাল।
সুখ স্বপ্নের সুর ছন্দের
কেন ময়ূরপঙ্খী পাই না।।
তখন কি আর পড়বে মনে আগের মতন করে,
. আমায় আগের মতন করে ?
আমার প্রাণের পরশ পেয়ে বেজেছিল যে গান
ধুলো জমা তানপুরাটাও ধরেছিল সেই তান
আমি, কথার গোলাপ ফুটিয়েছিলাম
. তোমাদের এই জল্ সারে |
তোমাদের এই ভালবাসা আমার গানের পুরস্কার
যাবার আগে জানিয়ে গেলাম আমার প্রীতি, নমস্কার
আমায়, যা’ দিয়েছো তাই নিয়েছি
. রেখেছি এই হৃদয় ভ’রে ||
. ঝরিয়ে চলে যায়॥
প্রেম বড় মধুর
কভু কাছে, কভু সুদূর
কখনো জীবনে ফুল ফোটায়
কাঁদিয়ে যায় সে দূর ||
প্রেম যেন নদী ভাঙে আর গড়ে
জীবনের দু’টি কূল ঘিরে
ভাঙা-গড়া খেলা, খেলে সারা বেলা
তীর ছুঁয়ে যায় ধীরে ধীরে
মিলনের গান গায়
বিরহের কান্নায়
হৃদয়ে বাজায় নূপুর ||
ভাঙা-গড়া ছন্দে, কখনোআনন্দে
কখনো যে সুর বিধূর ||
প্রেম যেন নারী আলো আর ছায়া
জীবনের নীলাকাশ ঘিরে
কখনো সে মায়া কখনো আলেয়া
মায়াবিনী দু’টি আঁখি-তীরে
ছায়াছবি এঁকে যায়
সুখে দুখে ঝঞ্ঝায়
আকাশে মেঘের সিঁদুর
বকুলের গন্ধে
ভরে’ সে সকাল-দুপুর ||