ভূপেন হাজারিকা
কবিতা কি শুধু তাই ?
মনের খেয়ালে কাগজে-কলমে
. শব্দ সাজাই ?
কবিতা কি শুধু রম্য-রচনা
ফুল পাখি আর চাঁদের জোছোনা
প্রিয়ার সঙ্গে জল-তরঙ্গ
. নৌকো ভাসাই ?
কবিতা কি শুধু “ওমর খয়াম”
অথবা বিরহী যক্ষের নাম
প্রেমের অনলে একাকিনী জ্বলে
. “বিরহিনী রাই” ?
কবিতা বন্দী চার-দেওয়ালে
তোমার আমার চোখের আড়ালে
কবিতাকে আনো রাজপথে আজ
. মিছিলে চাই॥
মৌনতার সুতোয় বোনা
একটি রঙিন চাদর।
সেই চাদরের ভাঁজে ভাঁজে,
নিঃশ্বাসেরই ছোঁয়া
আছে ভালোবাসার আদর।।
কামনার গোলাপ রাঙা,
সুন্দর একটি রাত্রিতে।
নিরব মনের বর্ষা,
আনে শ্রাবণ-ভাদর।
সেই বরষায় ঝড়ো ঝরে
নিঃশ্বাসেরই ছোঁয়া
আর ভালোবাসার আদর।।
ঝরে পড়ে ফুলের মতো
মিষ্টি কথার প্রতিধ্বনি
ছড়ায় আতর
যেন ছড়ায় আতর।
পরিভেদহীন সংজ্ঞা মুখিনীর মন আঁধার
কম্পন কাতর। (২)
নিয়ম ভাঙার নিয়মে যে (২)
থাক না বাধার পাথর।
কোমল আঘাত প্রতি-আঘাত,
রাত্রি নিথর কাতর।।
দূরের আর্তনাদের নদী,
ক্রন্দন কোনো ঘাটের। (২)
ভ্রুক্ষেপ নেই, পেয়েছি আমি,
আলিঙনের সাগর,
সেই সাগরের স্রোতেই আছে
নিঃশ্বাসেরই ছোঁয়া,
আর ভালোবাসার আদর।।
তবু কাঁদতে পারবো পরের দুঃখে অনেক ভাল তাও
মানুষ যেন কোর না আমায় মেঘ করে দাও
ফসল হারা শুকনো মাটির বৈশাখেতে তৃষ্ণা পেলে
সাগর থেকে জল এনে যে বৃষ্টি ধারায় দেব ঢেলে
আর রামধনুকে বলবো আমায় রাঙিয়ে দিয়ে যাও
আকাশটা যে হবে কাগজ তাতে বিজলী আখর দিয়ে
আরেকটা নয় মেঘদূত হোক লেখা আমায় নিয়ে,
আমি মজনুর চোখে হবো না মেঘ এই কি তুমি চাও ?
মানুষ যেন কোর না আমায় মেঘ করে দাও।
গঙ্গা আমার মা
পদ্মা আমার মা
আমার, দুই চোখে দুই জলের ধারা মেঘনা, যমুনা
একই আকাশ একই বাতাস
একই হৃদয়ে একই তো শ্বাস
দোয়েল কোয়েল পাখির মুখে একই মূর্ছনা
আমি এ-পার ও-পার কোন্ পারে জানি না
ও আমি সবখানেতে আছি
শংখচিলের ভাসিয়ে ডানা দুই নদীতে নাচি
একই আশা ভালবাসা
কান্না-হাসির একই ভাষা
দুঃখ-সুখের বুকের মাঝে একই যন্ত্রণা
চেতনাতে নজরুল
যতই আসুক বিঘ্ন-বিপদ
হাওয়া হোক্ প্রতিকূল
এক হাতে বাজে অগ্নিবীণা
কন্ঠে গীতাঞ্জলি
হাজার সূর্য চোখের তারায়
আমরা যে পথ চলি
এই সেই দেশ একদা যেখানে উপনিষদের ঋষি
সমতার গান গেয়েছিল আর শুনেছিল দশ-দিশি
প্রপিতামহের ভাষাতে আজো আমরা যে কথা বলি
হাজার সূর্য চোখের তারায় আমরা যে পথ চলি
এই সেই দেশ এখনও এখানে শুনি আজানের ধ্বনি
গীতা বাইবেল ত্রিপিটক আর শোনা যায় রামায়ণী
কবি কালিদাস ইকবাল আর গালিবের পদাবলি
হাজার সূর্য চোখের তারায় আমরা যে পথ চলি
জীবন বাবু নমস্কার
তোমার মত বন্ধু এমন
কোথায় আমি পাব আর
এই জীবনের কান্না-হাসির
তুমিই চিত্রনাট্যকার
বাংলা দেশের মানুষ কোরে
নিয়ে এলে দু’হাত ধরে
হলুদ নদী সবুজ বনের
ছায়ায় ঢাকা এ-প্রান্তরে
রবিঠাকুর নজরুলের এই
দেশ যে আমার অহংকার
কন্ঠে আমার দিয়েছো সুর
তোমার কাছে অনেক ঋণ
জীবনেরই গান গেয়ে যাই
আনন্দে তাই প্রতিদিন
মায়ের বুকের আদর স্নেহ
অন্তবিহীন আশীর্বাদ
ভায়ের ভালবাসা পেয়ে
মিটেছে এই মনের সাধ
এই জীবনের দুঃখ মুছে
পেলাম যে সুখ পুরস্কার
জীবনবাবু নমস্কার
একঝাঁক বুনো-হাঁস পথ হারালো
একা একা বসে আছি জানালা পাশে
সে কি আসে, যারে আমি বেসেছি ভালো
এলোমেলো হাওয়া চোখে স্বপ্ন আনে
শর্মিলা মনে আজ কেন কে জানে
ভালোবেসে চুপি চুপি দিয়েছে দোলা
একমুঠো অনুরাগ মন ভরালো
আমি একা যক্ষ এই শহরের
যারে ডাকি কেন তার পাই না সাড়া
চোখে তাই ঝরো ঝরো বৃষ্টি ধারা
ছায়া ছায়া নিভু নিভু আলোর রেখা
এ সময়ে ভালো আর লাগে না একা
বাতাসের হাতে আজ পেলাম চিঠি
বিরহের কথা মেঘ লিখে পাঠালো
শরৎবাবু,
খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে
তোমার ‘গফুর’ এখন
কোথায় কেমন আছে ?
তুমি জানো না
হারিয়ে গেছে কোথায় কখন
তোমার ‘আমিনা’
শরৎবাবু, এ’ চিঠি পাবে কি-না জানি না
গত বছর বন্যা হল, এ-বছর খরা
ক্ষেতের ফসল পুড়িয়ে দিল মাঠ শুকিয়ে ‘মরা’
একমুঠো ঘাস পায় না ‘মহেশ’ দুঃখ ঘোচে না
তুমি জানো না
বর্গীরা আর দেয় না হানা নেইতো জমিদার
তবু এ-দেশ জুড়ে নিত্য হাহাকার
ভাবছো তুমি দেশ তো স্বাধীন
আছে ‘ওরা’ বেশ
তোমার ‘গফুর’ ‘আমনা’ আর
তোমারই মহেশ
এক মুঠো ভাত পায় না খেতে
গফুর আমিনা
তুমি জানো না।
এ-শহর প্রান্ত
কলকাতা প্রান্ত
তোলে প্রাণে ঝংকার॥
সময়ের সীমানায় তোমাকে বাঁধা কি যায়
হাজার বছর তুমি পেছনে ফেলে
পায়ে পায়ে কত পথ পেরিয়ে এলে
যুগ থেকে চলেছে যুগান্ত॥
কে বলে তোমাকে ওগো মৃত-নগরী
মিছিল শহর বলে, হে সুন্দরী
না না সে তো শুধু নয়
তুমি ইতিহাস সৃষ্টির ইতিকথা
কলকাতা কলকাতা কলকাতা
নামে কত যাদু অফুরন্ত॥
নিয়নের আলেয়ার তোমাকে চেনা না যায়
মানুষের মৃগয়ায় মানুষ কাঁদে
বাঁচার লড়াই নিয়ে প্রতিযোগিতা
জন্মের ঋণ শোধ দিয়ে
হাসি আর কান্নাক গল্পকথা
দিন থেকে চলেছো দিনান্ত॥
মানুষ মানুষের জন্য
জীবন জীবনের জন্য
একটু সহনাভুতি কি
মানুষ পেতে পারে না ?
ও বন্ধু |
মানুষ মানুষকে পণ্য করে
মানুষ মানুষকে জীবিকা করে
পুরনো ইতিহাস ফিরে এলে
লজ্জা কি তুমি পাবে না ?
ও বন্ধু !
বলো কি তোমার ক্ষতি
জীবনের অথৈ নদী
পার হয় তোমাকে ধ’রে
দুর্বল মানুষ যদি
মানুষ যদি সে না হয় মানুষ
দানব কখনো হয় না মানুষ
যদি দানব কখনো হয় বা মানুষ
লজ্জা কি তুমি পাবে না ?
ও বন্ধু !
লোকে তোমায় বলে,
তাই তোমাকে চুপি চুপি মনের কথা কই
একটু সহজ করে কেন লিখলে না গো বই ?
সহজ করে লিখলে কিছু হত কি-গো ভুল
কঠিন কঠিন বানান ভরা ‘বর্ণপরিচয়ে’
পড়ার সময় দেখি শুধু চোখে সর্ষে ফুল
‘য’ ফলারা জড়িয়ে ধরে লাগে শুধু ভয়
ঠাকুরমায়ের আঁচলে তাই মুখ লুকিয়ে রই
‘জাড্য’ বানান করতো দেখি,---- বড়দা এসে বলে,
বিজীগীষা বানানে ভুল কানটা যে দেয় মলে’
সকাল-বিকাল শাসন করে দেখো না-কি তাও
‘ফটো’র থেকে নেমে এস, দেখতে যদি চাও
রাখাল বড় দুষ্টু ছেলে পালায় যে ইসকুল
ইচ্ছে করে পড়াশোনায় কেবলি দেয় ফাঁকি
সন্ধ্যেবেলায় তাইতে দু’চোখ ঘুমে ঢুল্ ঢুল্
দয়ার সাগর এসব খবর তুমি রাখো না কি
সুবোধ হতে চাই না আমি রাখাল যেন হই
হে দোলা হে দোলা
আঁকা বাঁকা পথে মোরা কাঁধে নিয়ে ছুটে যাই
রাজা-মহারাজাদের দোলা
আমাদের জীবনের ঘামে ভেজা শরীরের
বিনিময়ে পথ চলে দোলা
এই হেঁইয়া না, এই হেঁইয়া না, এই হেঁইয়া না।
ঐ দোলার ভেতরে ঝল্ মল্ করে যে
সুন্দর পোশাকের সাজ
আর, ফিরে ফিরে দেখ্ তাই ঝিকিমিকি করে যে
মাথায় রেশমের তাজ
হায়, মোর ছেলেটির উলঙ্গ শরীরে
একটুও জামা নেই---খোলা
দু’চোখে জল এলে মনটাকে বেঁধে যে
তবুও বয়ে যায় দোলা
হে দোলা . . . হে দোলা . . . হেঁইয়ো হো . . . হেঁইয়ো হো . . .
যুগে যুগে চলি মোরা কাঁধে নিয়ে দোলাটি
দেহ ভেঙে ভেঙে পড়ে
ঘুমে চোখ ঢুলু ঢুলু রাজা-মহারাজাদের
আমাদের ঘাম ঝরে পড়ে
উঁচু ঐ পাহাড়ে ধীরে ধীরে উঠে যাই
ভাল ক’রে পায়ে পা মেলা
হঠাৎ কাঁধের থেকে পিছলিয়ে যদি পড়ে
আর দোলা যাবে না তো তোলা
রাজা-মহারাজাদের দোলা
বড় বড় মানুষের দোলা॥
পা বাড়ালেই নদী
বুকের মধ্যে কুলুকুলু গঙ্গা ভাগীরথী
এই আমাদের কোলকাতা
প্রিয়তমা কোলকাতা
গাত বাড়ালেই বন্ধু মেলে
প্রেমের কোমলতা॥
মায়ের মত কোলকাতা তার কোলটি পাতা আছে
সবাইকে নেয় আপন করে দূরকে টানে কাছে
এই আমাদের কোলকাতা
আদরিনী কোলকাতা
ছড়ায় গানে ছড়িয়ে আছে অনের গল্প-কথা॥
আকাশ যেন “যামিনী রায়” বাতাস “রবি ঠাকুর”
সেই বাতাসে ভাসে আবার অগ্নিবীণার সুর
নজরুলের এই কোলকাতা
নেতাজীর এই কোলকাতা
কিশোর কবি সুকান্তের ছন্দে সুরে গাঁথা॥
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর কোলকাতাতে বান
দুঃখ-সুখের কান্না-হাসির ওঠে কলতান
“চোখের মণি” কোলকাতা
“জ্ঞানের খণি” কোলকাতা
চিরন্তনী ঐ শহরে আছে মানবতা॥
আগুন ঝরছে কবিতার সংসারে
কোকিলের লাশ ছড়ানো পথের ধারে
“কোরাপুট” জ্বলে, “কালাহাণ্ডীর” মাঠ
শিল্পী লেখক নায়ক বন্ধু
বাড়াও দরদী হাত॥
চোখের সামনে যাবতীয় শোকতাপ
আকাশ এখানে ছড়ায় যে উত্তাপ
কঙ্কাল সে তো মানুষের এক নাম
অনাহারে ভেঙে গেছে জীবনের হাট
শিল্পী লেখক গায়ক বন্ধু
বাড়াও দরদী হাত॥
ক্ষুধার ভূগোলে লেখা আছে দুটো নাম
শকুনের ঠোঁটে খুঁজে পাবে তার দাম
চোখের জলে কান্নায় ভেজে পথ
বলরাম কাঁদে কাঁদছে জগন্নাথ
শিল্পী লেখক গায়ক বন্ধু
বাড়াও দরদী হাত॥
গায়ক, তোমার তানপুরা তুলে রাখো
শিল্পী, তোমার রঙের তুলিতে আঁকো
কান পেতে শোনো কাঁদছে সুভদ্রা
রেখে দাও কবি প্রেমের কবিতা পাঠ
শিল্পী লেখক গায়ক বন্ধু
বাড়াও দরদী হাত॥
ও গঙ্গা তুমি বইছো কেন ?
নৈতিকতার স্খলন দেখেও
মানবতার পতন দেখেও
নিঃশব্দ অলসভাবে বইছো কেন ?
জ্ঞান-বিহীন নিরক্ষরের, খাদ্যবিহীন নাগরিকের
নেতৃত্বহীনতায় নীরব কেন ?
সহস্র বরষার উন্মাদনার মন্ত্র দিয়ে লক্ষজনেরে
সবল সংগ্রামী আর অগ্রগামী করে তোলোনা কেন ?
ব্যক্তি যদি ব্যক্তিকেন্দ্রিক
সমষ্টি যদি ব্যক্তিত্বরহিত
তবে, শিথিল সমাজকে ভাঙো না কেন ?
স্রোতস্বতী কেন নাহি ও
তুমি নিশ্টয় জাহ্নবী নও
তা হলে প্রেরণা দাও না কেন ?
উন্মত্ত ধরার কুরুক্ষেত্রের শরশয্যাকে আলিঙ্গন করা
লক্ষ কোটি ভারতবাসীকে জাগালে না কেন ?
কবিতা কি তাই ?
কবিতা কি শুধু তাই ?
মনের খেয়ালে কাগজে-কলমে শব্দ সাজাই ?
কবিতা কি শুধু রম্য-রচনা
ফুল পাখি আর চাঁদের জোছোনা
প্রিয়ার সঙ্গে জল-তরঙ্গ নৌকো ভাসাই ?
কবিতা কি শুধু “ওমর খয়াম”
অথবা বিরহী যক্ষের নাম
প্রেমের অনলে একাকিনী জ্বলে “বিরহিনী রাই” ?
কবিতা বন্দী চার-দেওয়ালে
তোমার আমার চোখের আড়ালে
কবিতাকে আনো রাজপথে আজ মিছিলে চাই॥
কৃষ্ণকলি মা
কান্না-ভেজা দু’চোখ তোমার
ব্যথায় ভরা বুক
তোমায় দেখে মনে পড়ে আমার মায়ের মুখ॥
তোমার মেয়ে পলিন’
আমার “পারুল” বোনের নাম
কবি মোলায়েজ
আমার নজরুল ইসলাম
জীবন দিয়ে কেনে ওরা স্বাধীনতার সুখ॥
বৃষ্টিহারা আফ্রিকা
তুই কেনিয়াটার মা
বিশ্ব জুড়ে ম্যান্ডেলা
আর হাজার লুমুম্বা
বর্ণভেদের মেঘ সরিয়ে দেখায় আলোর মুখ
ইথিওপিয়ার ক্ষধার জ্বালা
কান্না হয়ে শেষে
কঙ্গো নদীর স্রোতের ধারায়
গঙ্গাতে আজ মেশে
প্রাণের সূতোয় গাঁথা মোদের দুঃখ এবং সুখ॥
সাগর সঙ্গমে সাঁতার কেটেছি কত কখন তো হই নাই ক্লান্ত,
তথাপি মনের মোর প্রশান্ত পসাগরে উর্মিমালা অশান্ত
মোর মনের প্রশান্ত সাগরের বক্ষে জোয়ারের নাই আজ অন্তঃ
অজস্র লহরী নব নব গতিতে এনে দেয় আশা অফুরন্ত
মোর প্রশান্ত পারের কত মহাজীবনের শান্তি আজ আক্রান্ত
নব নব সৃষ্টিকে দৈত্যদানবে করে নিষ্ঠুরাঘাত অবিশ্রান্ত
ধ্বংসের আঘাতে দিয়ে যায় প্রতিঘাত সৃষ্টির সেনানী অনন্ত ,
সেই সংঘাত আনে মোর প্রশান্ত সাগরে প্রগতির নূতন দিগন্ত
মোর গভীর প্রশান্ত সাগরের শক্তি ধ্বংসকে করে দিকভ্রান্ত
অগমন মানুষের শান্তির অভিযান সৃষ্টিকামী জীবন্ত
এ কেমন রঙ্গ
ভালবাসা পোড়ায় যে মন
পোড়ে না তো অঙ্গ
পিরীতির রীতি এমন,
দূরে গেলে কাঁদে যে মন
দু’চোখের কুল ছাপানো ব্যথারই তরঙ্গ।
চুপি চুপি আসা যাওয়া
তারই নাম ফাগুন হাওয়া,
ফাগুনের আগুনে হায় পোড়ে যে পতঙ্গ
সোহাগের রীতি এমন,
কাছে এলে কি জ্বালাতন
দিবানিশি মন ভোলানো কথারই প্রসংগ
আজ জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয়
আয় মরণ ভুলে গিয়ে ছুটে ছুটে আয়
হাসি নিয়ে আয় আর বাঁশি নিয়ে আয়
আজ যুগের নতুন দিগন্তে সব ছুটে ছুটে আয়
আজ ফাগুন ফুলের আনন্দে সব ছুটে ছুটে আয়
মনের চড়াই পাখিটির বাঁধন খুলে দে
শিকল খুলে মেঘের নীড়ে আজ উড়িয়ে দে
যত বন্ধ হাজার দুয়ার ভেঙে আয়রে ছুটে আয়
সময় ধারাপাতে দেখো নেই বিয়োগের ঘর
চলার পথে পথে পথের বাঁকে নেই তো আপন পর
কি আর পাবি কি আর দিবি আঙ্গুল গুণে কি
লাভের খাতায় হিসাব করে জীবন ভরে কি
আজ পাওনা দেনা মিটিয়ে দিয়ে আয়রে ছুটে আয়
আর ভালবাসার পান্না হীরে কুড়িয়ে নিয়ে আয়
এই ফাগুন ফুলের আনন্দে সব ছুটে ছুটে আয়
আমি গঙ্গার থেকে মিসিসিপি হয়ে ভলগার রূপ দেখেছি
অটোয়ার থেকে অষ্ট্রিয়া হয়ে প্যারিসের ধুলো মেখেছি
আমি ইলোরার থেকে রং নিয়ে দূরে শিকাগো সহরে গিয়েছি
গালিবের ‘শের’ তাসখন্দের মিনারে বসে শুনেছি
মার্ক টোয়েনের সমাধিতে বসে গোর্কির কথা বলেছি
বারে বারে আমি পথের টানেই পথকে করেছি ঘর
বহু যাযাবর লক্ষ্যবিহীন আমার রয়েছে পণ,
রঙের খনি যেখানে দেখেছি রাঙিয়ে নিয়েছি মন
আমি দেখেছি অনেক গোলাপ বকুল ফুটে আছে থরে থরে,
আবার দেখেছি না ফোটা ফুলের কলিরা ঝরে গেছে অনাদরে,
প্রেমহীন ভালবাসা দেশে দেশে ভেঙেছে সুখের ঘর |
পথের মানুষ আপন হয়েছে, আপন হয়েছে পর, তাই আমি যাযাবর
এই জীবন্ত নাটকের নাট্যশালায়
কেউ হাহা হিহি হাসছে,
এই ঘুরন্ত মঞ্চের অন্তরালে
চোখের জলে কেউ ভাসছে
রূপকথা নয় তবু রূপকথা মনে হয়,
আছে কত কাহিনির লজ্জা
কেউ রাজা হবু আর কেউ গবু মন্ত্রী,
চকমকি বাহারের সজ্জা
হাসি আর কান্নার, হৈ চৈ হল্লার
একটানা সুর ভেসে আসছে
এই কানামাছি জীবনের ভোজবাজি নাটকের
নায়ক আর নায়িকার গল্প----
হায়, চোখ বাঁধা রয় কারও চোখ থেকে অন্ধ----
শোন সব কাহিনী সেই অল্প
কেউ আলাদিন সেজে হায় যত সুখ মন চায়
সবটুকু তার খুঁজে পাচ্ছে,
কেউ আলিবাবা হয়ে ভাই হিজিবিজি রাস্তায়
সারাদিন ঘুরপাক খাচ্ছে
এত ব্যথা পেয়ে মন তবু কেন অকারণ
মনকে ফের ভালোবাসছে
আমার দুখিনী বাংলা
তোর কপালের সিঁদুরে টিপ মুছিয়ে দিল ঝড়
বানভাসি তোর নদীর বুকে আমরা লখিন্দর
চোখের জলে বুক ভেসে যায়
ঘর ভেসে যায় বানে
তুল্ সী তলায় পিদিম জ্বেলে
কে দেবে উঠোনে
তোর ভবিষ্যৎ এমন করে
দিল দ্বীপান্তর
রূপসী বাংলা আমার শ্যামলী বাংলা
ও তোরা ফুলেশ্বরী ধানের খেতে নেই তো সোনা রং
নদীর জলে ভাসছে হাজার লখিন্দরের শব
লক্ষ্ণী পেঁচা, চড়ুই পাখি বসে না আর ঘরে
চন্ডীতলার, আটচালা তোর ভেঙে গেছে ঝড়ে
চূর্ণী নদীর ঘূর্ণী জলে ভাসছে তেপান্তর
সুর - সুপর্ণকান্তি ঘোষ
শিল্পী- ভূপেন হাজারিকা
ও মালিক সারাজীবন কাঁদালে যখন আমায় মেঘ করে দাও |
তবু কাঁদতে পারবো পরের দুঃখে অনেক ভাল তাও |
মানুষ যেন কোর না আমায় মেঘ করে দাও ||
ফসল হারা শুকনো মাটির বৈশাখেতে তৃষ্ণা পেলে
সাগর থেকে জল এনে যে বৃষ্টি ধারায় দেব ঢেলে
আর রামধনুকে বলবো আমায় রাঙিয়ে দিয়ে যাও ||
আকাশটা যে হবে কাগজ তাতে বিজলী আখর দিয়ে
আরেকটা নয় মেঘদূত হোক লেখা আমায় নিয়ে,
আমি মজনুর চোখে হবো না মেঘ এই কি তুমি চাও ?
মানুষ যেন কোর না আমায় মেঘ করে দাও |